প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের সফর শেষে আজ সকালে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান সকাল ১০টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে, সোমবার (লন্ডন সময়) সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রী তার তিন দেশ সফরের প্রথম ধাপে ২৫ এপ্রিল জাপানে পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি১৪০৩) বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে জাপান লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং বিমানবন্দরে তাকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান করে।
টোকিওতে অবস্থানকালে তিনি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী আটটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে কৃষি, মেট্রো-রেল, শিল্পের উন্নয়ন, জাহাজ-রিসাইক্লিং, মেধা সম্পদ, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা ও কাস্টমস খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল জাপান সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর একই দিনে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৭ এপ্রিল একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন এবং একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় যোগ দেয়ার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেন।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সঙ্গে জাইকা, জেট্রো, জেইবিআইসি, জেবিপিএফএল এবং জেবিসিসিইসি-এর নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেন।
তিনি জাপানের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্ত্রী আকি আবে এবং জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সাথেও বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে টোকিওতে চার দিনের সরকারি সফর শেষ করে তাঁর তিন দেশ সফরের দ্বিতীয় ধাপে ২৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং কিছু পার্শ্ব ইভেন্ট যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পাশাপাশি একটি নাগরিক সংবর্ধনাতেও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরের তৃতীয় ধাপে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) রাজা ও রানী হিসেবে তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াাশিংটন ডিসি থেকে ৪ মে লন্ডনে পৌঁছেন।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ৬ মে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানীর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
লন্ডনে শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার স্ত্রী সুসানা স্পার্কসও লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিনে ক্লারিজ হোটেলের ফয়ের প্রাইভেট ডাইনিং রুমে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন।
যুক্তরাজ্য সফরকালে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে অবস্থান করেন।
তিনি সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং রানী জেটসুন পেমার সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে মিশর ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, গাম্বিয়া, নামিবিয়া ও উগান্ডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডও ৭ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকরা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন।
একই দিনে লন্ডনের ম্যারিয়ট হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা নাগরিক সংবর্ধনা দেয় এবং শেখ হাসিনা বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন।