রাজশাহী: কিংবদন্তি কণ্ঠশিলী এন্ড্রু কিশোরকে ছাড়া প্রথমবারের মতো তার জন্মদিন উদযাপন করলেন ভক্ত এবং ঘনিষ্ঠজনরা।
বুধবার (৪ নভেম্বর) শিল্পীর ৬৬তম জন্মবার্ষিকীতে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এন্ড্রু কিশোরের প্রতিষ্ঠা করা সংগঠন আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে এন্ড্রু কিশোরের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ, কেক কাটা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এন্ড্রু কিশোরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য দেওয়া হয়। এরপর শিল্পীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের নতুন কমিটির সদস্যদের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এন্ড্রু কিশোরের বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাস, তার স্বামী প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস, আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সভাপতি ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মঈনুল আলম খোকন, সহ-সভাপতি কাজী সুলতান মাহমুদ, সাবিনা আনজুম শাপলা প্রমুখ।
কেক কাটার পর এন্ড্রু কিশোরের গানগুলো নিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সদস্যরা সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মঈনুল আলম বলেন, গতবছরও এদিনে দাদা (এন্ড্রু কিশোর) ছিলেন। আজ দাদাকে ছাড়াই তার জন্মদিন উদযাপন করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। তারপরও সুখের বিষয় এই যে, দাদা তার সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের মাঝে থাকবেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা- দাদা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার মা ছিলেন সংগীতানুরাগী। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। ১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই’ প্রকাশ পায় ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে।
এরপর ১৯৮২ সালে এন্ড্রু কিশোর ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রের ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে আরও সাত বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন গুণী এ শিল্পী। এছাড়া তিনি জীবদ্দশায় পাঁচ বার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার ও দুইবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ উপাধি।
গত বছর উপমহাদেশের কিংবদন্তি এই শিল্পীর দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চললেও চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে গত ১১ জুন রাজশাহী আনা হয়। দীর্ঘ ১০ মাস ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরে ৬ জুলাই রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। ১৫ জুলাই রাজশাহীতে তার পছন্দের জায়গায় সমাহিত করা হয়।