নির্দলীয় সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আজকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা পরিবর্তন চায়, এই সরকারকে সরাতে চায়। দলীয় সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সবাই একমত, সরকারের পদত্যাগ চাই, সংসদের বিলুপ্তি চাই। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই বলি না কেন, সেই সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে যেতে হবে।’
বুধবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
‘পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা : নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনো সংবিধান সম্মত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ। ৬ পৃষ্ঠায় প্রবন্ধে আদালত কর্তৃক ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল, পঞ্চদশ সংশোধনীর সংযোজনের নানা আইনি ত্রুটি তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে সংকট নিরসনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। পরে আলোচনায় বক্তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিএনপির দাবি যৌক্তিক। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন শেখ হাসিনা। তিনি ২০০৬ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখেছিলেন- সাংবিধানিক ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ ২০০৭ সালেও তিনি সংস্কারের কথা বলে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই কার্যকরীর কথা বলেছেন। তবে আজ কেন তত্ত্বাবধায়ক দিতে তার এত আপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচটা নির্বাচন করেছি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্যই পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসেছে একটু ভিন্নভাবে ভিন্ন মোড়কে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আমরা লড়াই-সংগ্রামটা করছি। আমরা একটা জায়গায় ঐকমত্য হব যে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনোভাবে জনগণের ক্ষমতায় যাওয়ার উপায় নাই। জনগণের প্রতিনিধিদের যদি ক্ষমতায় যেতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সেটা জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য। এটাই হচ্ছে মূল কথা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক আদায় করে নিতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান আদালতের মাধ্যমে হয় না, রাজপথেই হয়। তাই রাজপথ ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে নামতে হবে। ভাগাভাগি, লাভ-লোকসান নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। অর্জনের আগে ভাগ হয় না। তাই এসি রুমে বসে আওয়াজ তুলে কোনো লাভ নেই। জনগণের দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই দাবি নিয়ে মাঠে নামতে পারলে কেউ রুখতে পারবে না।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপির মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, এজে মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খানসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক।