আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কারো সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি তিনশ আসনে মনোনয়ন দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এজন্য অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃস্টি করতে হবে। আর এই পরিবেশ প্রধানমন্ত্রীকেই সৃষ্টি করতে হবে। এসময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই সংসদে এখন তিনি আছেন। আমার কথা তিনি শুনছেন। দেশের মানুষও কি চায় তিনি ভালো ভাবেই জানেন। মানুষ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই এরকম একটি নির্বাচন আয়োজনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একমাত্র তিনিই নির্বাচনের সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেন।
বৃহস্পিতার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এসব কথা বলেন। সরকারের ত্রুটি ধরিয়ে দিতে গেলে জাতীয় পার্টিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দাবি করে এসময় তিনি আরও বলেন, অনেকে আমাদেরকে বলেন, আপনারা সরকারের সমালোচনা করেছেন-আপনারা কী বিএনপির দিকে চলে গেছেন?
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, সরকারের সমালোচনা করা, সরকারের ভুল ত্রুটি তুলে ধরা- বিরোধীদল হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটাই আমাদের দলের রাজনীতি। কিন্তু এটা করলে আপনি (সরকারিদল) কেন ভাবেন বিএনপির সঙ্গে যাব কিনা? আবার সরকারের পক্ষে কথা বললে, বিএনপি ভাবে আমরা সরকারের সঙ্গে যাব কিনা? ‘না’, আমরা কারো সঙ্গে যেতে চাই না। যাবোনা। আমরা আগামীতে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবো।
এসময় তিনি আরও বলেন, স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- জাতীয় পার্টি একটি আলাদা দল, তাদের একটি প্রতিক আছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। কারো পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু অতীতের কথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এটা ভুলে গেলে চলবেনা। জাতীয় পার্টির অবদান ভুলে গেলে চলবেনা।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে নিয়ে এই সংসদে সরকারি দলের কয়েকজন সদস্য সমালোচনা করেছেন। তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমি জানতে চাই সরকারের কাছ থেকে জি এম কাদের সাহেব কি সুবিধা নিয়েছেন।
আমার জানা মতে তিনি কোনও সুবিধা নেননি। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে যে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা, তিনি তাই পান। তাই নেন। এর বাইরে কোথাও কোনও সুযোগ সুবিধা জি এম কাদের সাহেব নেন না।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জি এম কাদের সাহেব একটি বড় দলের চেয়ারম্যান। তিনি কি বলবেন, তা কি অন্য দলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বলবেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বলবেন। এমনটা যারা ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এসময় প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বেগম পাড়া হচ্ছে। সেকেন্ড হোম হচ্ছে। ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। ঋণ খেলাপী বাড়ছে। মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট চলছে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর নামে দফায় দফায় খরচ বাড়ানো হচ্ছে। দূর্ণীতি ও দলীয় করণ এখন ওপেন সিক্রটে। মানুষের জান মালের রিাপত্তা নেই। এ থেকে পরিত্রানের কথা বাজেটে নেই। সুনির্দিষ্ট কোনও দিকনির্দেশনাও নেই।
ভোটের মাধ্যমে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রতিবাদ করতে হবে: এদিকে বুধবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা-কর্মী এবং ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মেজর (অবঃ) সিকদার মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
এসময় তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কাউকে লিখিত দিয়ে রাজনীতি করে না। আমরা কারো এজেন্ট নই, কারো পক্ষ করা আমাদের রাজনীতি নয়। আমরা আমাদের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার তিনশো আসনেই নির্বাচন করার সাহস রাখি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। সকল ভোটার যেনো নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসতে পারে এমন পরিবেশ তৈরী করতে হবে।
ভোটারদের উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ভোটের মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে। অবস্থান কর্মসূচি নয়, মারামারি নয়- ভোটের মাধ্যমে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রতিবাদ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ মোটেই ভালো ছিলো না। সিটি নির্বাচনে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। যদি ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনেও এই অবস্থাই চলে তাহলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে আমরা অংশ নেবো কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে।
জাতীয় পার্টির উত্তরের আহবায়ক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। বক্তব্য রাখেন- ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মেজর (অবঃ) সিকদার মোঃ আনিসুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম, মোহাম্মদ রাজু, মো. সামছুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু।
উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমূখ।
সভায় মো. মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ঢাকা-১৭ আসন জাতীয় পার্টির। এই আসনে আমাদের প্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত ছিলেন। এই আসনে বিজয়ী হতে আমাদের পক্ষে অনেক ইতিবাচক দিক আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে। সিলেট সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত ছিলো। আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ও বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
অবস্থা যেনো এমন, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ভোট দিতে গেলে সুরক্ষিত থাকবে আর এর বাইরে যারা তাদের সমস্যা হবে। ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে না গেলে তাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায় না।
আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি না হলে সুষ্ঠু পরিবেশ সম্ভব নয়। বরিশাল সিটি নির্বাচনে লাঙ্গলের অনেক সমর্থককে আটক করে ৮ ঘন্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শাসক দলের কারো নামে মামলা থাকলে আটক করা হয় না কিন্তু অন্য দলের কারো নামে মামলা থাকলে তাদের নির্বাচনের আগে আটক করা হয়।