কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে গত ১৮ ডিসেম্বর টাইব্রেকারে বিশ্বকাপ-ভাগ্য সুতোয় দুলছিল আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের। শত কোটি মানুষের চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। টাইব্রেকারে ফ্রান্সের কিংসলে কোমানের শট অসীম দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ওই শটটি না ফেরালে হয়তো ৩৬ বছর পর নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হতো না আলবিসেলেস্তেদের। এক টাইব্রেকারেই হিরো বনে যান মার্তিনেজ। তিন যুগ পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম নায়ক গোলকিপার মার্তিনেজ আজ বাংলাদেশে আসছেন। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে বিমানে সাত হাজার ৬৩৩ কিলোমিটার পারি দিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। তবে ঢাকায় ১২ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে এলেও মার্তিনেজকে দেখার সুযোগ থাকছে না ক্রীড়ামোদীদের।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশে আসছেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের তারকা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। তার সঙ্গে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীও থাকবেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যাবেন হোটেলে। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড নেক্সটের কোম্পানি নেক্সট ভেঞ্চারের কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন অ্যাস্টনভিলা তারকা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মার্তিনেজ। এরপর বিকালের ফ্লাইটে মার্তিনেজ চলে যাবেন কলকাতায়। রোববার অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেক্সট ভেঞ্চারের সিইও সৈয়দ আব্দুল্লাহ জায়েদ এবং চিফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার সৈয়দ আব্দুল্লাহ গালিব জানান, ‘আমাদের ইচ্ছা ছিল মার্তিনেজকে নিয়ে একটি পাবলিক অনুষ্ঠান করার। ২৬ জুন ঢাকায় আসার সময় নিশ্চিত করেন তিনি। ঈদের ছুটি এবং তিনি খুবই কম সময় ঢাকায় থাকবেন ফলে সেই অনুষ্ঠান সম্ভব হচ্ছে না।’
মার্তিনেজের সফরে তাদের অফিসের সূচি নিয়ে জায়েদ বলেন, ‘আমরা মার্তিনেজকে বাংলাদেশের মানুষের আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে দেখাব। আমাদের অফিসে স্টাফরা কিছু সময় কাটাবেন তার সঙ্গে। আমন্ত্রিত অতিথিরাও থাকবেন সংক্ষিপ্ত এ অনুষ্ঠানে।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ঢাকায় নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূতও থাকতে পারেন।’ গালিব বলেন, ‘আমরা আইটি কোম্পানি, তাই আইসিটি মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। মাশরাফি মুর্তজা আর্জেন্টিনার সমর্থক। তিনি তরুণ সমাজের আইকন। সেই হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল দল ভারত থেকে আসছে। দেশে থাকলে আমরা অবশ্যই তাদের কয়েকজনকে দাওয়াত দিতাম।’
মার্তিনেজকে ঢাকায় আনার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নেক্সট ভেঞ্চার্স ফ্লাগশিপ ব্র্যান্ডের জন্য মার্তিনেজকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সংক্ষিপ্ত এই সফরে মার্তিনেজ একটি ছোট সাক্ষাৎকারে অংশ নেবেন এবং ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য ফটোশুটেও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ-সদস্য মাশরাফি মুর্তজাসহ আরও কয়েকজন তারকার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন মার্তিনেজ। মার্তিনেজকে ঢাকায় আনছেন কলকাতার স্পোর্টস প্রমোটার শতদ্রু দত্ত। কলকাতা থেকে শতদ্রু দত্ত বলেন, ‘আমস্টারডাম থেকে সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকায় পৌঁছবেন মার্তিনেজ। এরপর হোটেলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নেবেন। দুপুরের দিকে পৌনে এক ঘণ্টার জন্য কোম্পানির অফিস (নেক্সট ভেঞ্চার্স ও ফান্ডেড নেক্সট) পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপরই বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিশ্বসেরা এই গোলকিপার।’ জানা গেছে, ঢাকায় বেশি সময় মার্তিনেজকে রাখার বিষয়ে সম্মতি ছিল শতদ্রুর। কিন্তু এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাই তিনি আসছেন অনেকটা শুভেচ্ছাদূত হয়ে। শতদ্রুর কথায়, ‘মার্তিনেজ বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। তাই তিনি তেমন কোনো অর্থই নিচ্ছেন না এই সফর থেকে। শুধু বিমান খরচ ও আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় ছাড়া।’
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার কোটি কোটি সমর্থক থাকা সত্ত্বেও মার্তিনেজের ঢাকায় আসার বিষয়ে তেমন গা করছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তাদের তেমন কোনো উদ্যোগও নেই এ বিষয়ে। তাই হয়তো বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকেও আমন্ত্রণ জানায়নি ফান্ডেড নেক্সট।