রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ৩০ দেশ। এর মধ্যে সৌদি আরব এক নম্বরে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই শীর্ষে ছিল দেশটি। মাঝে কয়েক মাস সৌদি আরবকে টপকে শীর্ষস্থানে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ দু’মাস (মে-জুন) সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। ফলে আবারও শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে সৌদি আরব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩৫২ কোটি ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ২৪ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।
গত এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার দিক থেকে শীর্ষ দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় ২৬ কোটি ডলার বা ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। শেষ দুই মাসে সৌদি আরব থেকে এভাবে না বাড়লে এবার যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে থাকত।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে এসেছে ৩০৩ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য। সেখান থেকে এসেছ ২০৮ কোটি ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা কুয়েত থেকে ১৫৬ কোটি ডলার এসেছে। এছাড়া কাতার থেকে ১৪৫, ইটালি থেকে ১১৯, মালয়েশিয়া থেকে ১১৩, ওমান থেকে ৭৯ এবং বাহরাইন থেকে ৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে ৪২ কোটি ডলার, ফ্রান্স থেকে ২৯ কোটি ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রায় ২৪ কোটি ডলার, কানাডা থেকে প্রায় ১৪ কোটি ডলার, গ্রিস থেকে ১৩ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৩ কোটি ডলার, জর্ডান থেকে প্রায় ১৩ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রায় ১২ কোটি ডলার, জাপান থেকে ১১ কোটি ডলার, জার্মানি থেকে ১১ কোটি ডলার, মরিশাস থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলার, স্পেন থেকে আট কোটি ডলার, ব্রুনাই থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার, লেবানন থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার, পর্তুগাল থেকে প্রায় চার কোটি ডলার, ইরাক থেকে প্রায় চার কোটি ডলার, সুইডেন থেকে তিন কোটি ডলার, মালদ্বীপ থেকে প্রায় তিন কোটি ডলার, সাইপ্রাস থেকে প্রায় তিন কোটি ডলার এবং আয়ারল্যান্ড থেকে দুই কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানি শিল্পোদ্যোক্তা সজল ডি. ক্রুজ বলেন, বিদায়ি অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছি। তার আগের অর্থবছরে পাঠিয়েছি চার কোটি টাকার মতো। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে এ টাকা পাঠাই। ছুটিতে অন্য কোথাও যাই না। বাংলাদেশে গিয়ে ঘোরাঘুরি করি। দেশের প্রতি প্রাণের টান আছে। যে টান কখনো ভুলে থাকতে পারি না। ২০০৪ সালে জাপানে আসি লেখাপড়া করতে। লেখাপড়া শেষ করে কিছু দিন চাকরি করি। স্বপ্ন দেখি উদ্যোক্তা হওয়ার। এরপর গঠন করি কোম্পানি। এভাবেই আজকে একটি অবস্থানে এসেছি। রেমিট্যান্সে প্রণোদনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। তবে দেশের ভেতর এবং বাইরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আরও বেশি সম্মানিত করলে খুশি হতাম।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ২১৬১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আসে ২১০৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে বিদায়ি অর্থবছর রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৫৮ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ মাস জুনে এসেছে ২২০ কোটি ডলার। যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২১ সালের জুলাইতে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে মহামারি করোনার মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভরা করোনার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে বেশির ভাগ মানুষের আয় কমলেও তখন হুন্ডি চাহিদা তলানিতে নামে। যে কারণে বৈধ চ্যানেল ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর বিকল্প ছিল না। ফলে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে তখন।