সাকিব আল হাসান ক্যারিয়ারের পুরো সময়টাই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মাঠের পারফরম্যান্সের কারণে তো অবশ্যই; আলোচনায় ছিলেন মাঠের বাইরের নানা কারণেও।
কখনও দর্শক পিটিয়ে, ড্রেসিং রুমে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে; কখনো আবার বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গিয়ে।
ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করায় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও নিষিদ্ধ করেছিল তাকে। গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটের প্রতি সাকিবের নিবেদন কতটা এ নিয়েও প্রশ্ন ছিল অনেকের। এর মধ্যে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।
শুক্রবার নিজের বাসায় সাকিবকে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেন পাপন। এরপর সাকিবের ক্রিকেটের প্রতি সিরিয়াসনেস নিয়েও কথা বলেন তিনি। পাপন জানালেন, আগে সন্দেহ থাকলেও এখন সাকিবকেই সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস মনে হচ্ছে তার।
তিনি বলেন, ‘ওর প্রতিভা নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নাই। একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগছে এখন, গত এক বছর ধরে প্রায় আমি দেখছি। সাকিবের ব্যাপারে যে সন্দেহটা সবসময় আমার মধ্যে ছিল, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, মনে হতো- আসলে ও কতটুকু সিরিয়াস, কোন খেলাটা খেলবে, খেলবে না। এখন দেখছি ক্রিকেট নিয়ে ওর চেয়ে সিরিয়াস কেউ নেই। ’
‘আমাদের যে পরিমাণ খেলা, সেগুলো তো খেলছে। ধারাবাহিকভাবে খেলে যাচ্ছে। কানাডায় গেল, এখন আবার শ্রীলঙ্কায় গেল। এই যে এখন আবার বিশ্বকাপ, অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, আমার কাছে মনে হচ্ছে সে এখন ক্রিকেটে পুরোপুরি মনোযোগী। এটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তার সামর্থ্য বা প্রতিভা নিয়ে কখনোই কারো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই আসে না। ’
সাকিব আল হাসান এখন তিন ফরম্যাটেই দলের অধিনায়ক। আগে থেকেই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির দায়িত্বে ছিলেন, এখন পেলেন ওয়ানডেও। যদিও সব ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেবেন কি না, এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান বিসিবি সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তার (সাকিব) জন্য তিন সংস্করণে একসঙ্গে অধিনায়কত্ব করা কঠিন। এটা তার সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে হবে। সে কোন সংস্করণে করতে চায়, কোনটা রাখতে চায়, যদি এক-দুই সংস্করণ চায়, তাহলে একরকম, আবার ও যদি বলে তিন সংস্করণেই করতে চাই, তাহলে তো সমস্যাই নেই। তো এই ব্যাপারটা জেনে তারপরে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। ’
১৭ জনের স্কোয়াডে নেই আফিফ-রিয়াদ
এ বছর ইংল্যান্ড সিরিজের পর আর ওয়ানডে খেলেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবুও এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আলোচনায় বেশ ভালোভাবেই ছিলেন তিনি।
এ মাসের শুরু থেকে হওয়া এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের ক্যাম্পেও দেখা যায় তাকে। তবে তাকে যে স্কোয়াডে রাখা হচ্ছে না, একরকম জানিয়েই দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
শুক্রবার সাকিব আল হাসানকে ওয়ানডে অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। লম্বা সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। এ সময় তার কাছে এশিয়া কাপের স্কোয়াড নিয়েও জানতে চাওয়া হয়। বিস্তারিতভাবে স্কোয়াডের ব্যাখা দেন পাপন। কখনো জানান নিজের ব্যক্তিগত মতামত, কখনো আবার বলেন প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এটা মনে হয় মোটামুটি ক্লোজ (এশিয়া কাপের স্কোয়াড) হয়ে গেছে। অন্তত চারটা পেসার নিয়ে যাবে। আমাদের পাঁচজন থেকে যেকোনো চারজন যাবে। আবার এমনও হতে পারে পাঁচজন নেবে। নিতে হবে কিন্তু ১৭ জন। বিশ্বকাপে নিশ্চিত পাঁচটা নিয়ে যাবো পেসার, মানে আমার ধারণা। যে ধরনের উইকেটে খেলা হবে, তাই করবে। তারপরও ধরছি চারজন নেবে। ’
‘স্পিনার আমাদের সাকিব আছে, মিরাজ আছে; তারপর একটা অতিরিক্ত স্পিনার নিতে হবে অবশ্যই। তাইজুল আর নাসুম আছে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে আমার ধারণা নাসুমের সম্ভাবনাই বেশি। এখানে আরেকটা চলে গেলো। পাঁচটা চলে গেলো। এদের ছাড়া, আমি মিরাজ ও সাকিবের নাম বলেছি; তাহলে সাতজন হয়ে গেলো। আমার একটা ওপেনার বাকি, তাওহী হৃদয়-শান্ত-মুশফিক বাকি আছে। এদেরকে বাদ দিয়ে তো আর করা যাবে না। ’
স্কোয়াডে খুব বেশি জায়গা দেখেন না জানিয়ে পাপন আরও বলেন, ‘আসলে আপনারা যত অপশন দেখেন, আমি কিন্তু এরকম অপশন কিছু দেখি না। এটা খামাখা একটা দ্বিধা তৈরি করা বা মন খারাপ বোর্ডের সঙ্গে প্লেয়ারদের। এগুলো করার কোনো কারণ দেখি না। অতিরিক্ত প্লেয়ার কাকে নেবো এটা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি মনে করি এখানে আফিফ আছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছে, শামীম পাটোয়ারী আছে। ’
তিন ক্রিকেটারের নাম বলার পর এক সাংবাদিক জানতে চান তারা কি ১৫ জনের স্কোয়াডে নেই? জবাবে পাপন বলেন, ‘১৭জন। আমার তো ১৭ শেষ আগেই তারপরও আপনাদেরকে বলছি। আপনারা যে কাকে বাদ দিচ্ছেন আমি এখনও জানি না। বুঝি না কেন বলেন। ধরেন আমার এদেরকে ঢুকাতে হতে পারে। ইভেন মোসাদ্দেকও হতে পারে। ’
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যদি আমি মেইন স্কোয়াডে না খেলাই, তাহলে এক সিদ্ধান্ত। যে আমি নিয়ে যাবো কিন্তু খেলাবো না। কিন্তু কিছু খেলোয়াড় আছে যাদেরকে নিলে খেলাতে হবে। তাহলে বাদটা দেবে কাকে। আমি বলছি সিদ্ধান্ত এত সহজ না। এটাকে এত জটিল করার কিছু নাই। ’