পোড়া বঙ্গবাজারে উঠছে ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন। নতুন নামে এই ভবনে দোকান থাকবে ৩ হাজার ৪২টি। থাকবে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে মার্কেট নির্মাণের সময়ে কোথায় বসে ব্যবসা করবেন এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১০ তলাবিশিষ্ট এই মার্কেটটির নাম হবে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’। এরই মধ্যে মার্কেটের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসের মধ্যে নকশা অনুমোদন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এই মার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেট (একাংশ), মহানগর শপিং কমপ্লেক্স (একাংশ), বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আর্থিক ক্ষতি ৩০৩ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান নির্মাণের নকশা তৈরির কাজ হচ্ছে। নকশা তৈরি করছে আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠান। নকশা চূড়ান্ত হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর ১০ তলা এই বিপণি বিতানে বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটটি ফ্লোর থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত দোকান থাকবে তিন হাজার ৪২টি। এর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি, সপ্তম তলায় ৩১৩টি। অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীদের আবাস ও অন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রস্তাবিত নকশায় রাখা হয়েছে ২২টি খাবারের দোকানের জায়গা। এর বাইরে আরও ৮১টি দোকান বেশি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ বর্গফুট। বিপণি বিতানটিতে লিফট থাকবে আটটি। এর মধ্যে ক্রেতাদের জন্য চারটি ও মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য কার্গো লিফট থাকবে চারটি। থাকবে ১১টি সিঁড়ি। ছয়টি ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি। এছাড়া প্রতি ফ্লোরে চারটি করে টয়লেট থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮৩টি গাড়ি পার্কিং ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ বর্গফুট আয়তনের এ ভবনটি তৈরি করতে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড।
বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন অস্থায়ী চৌকিতে শামিয়ানা টানিয়ে ব্যবসা করছেন। এখানে অধিকাংশই জামাকাপড়ের দোকান। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেবে- এ উদ্যোগে আমরা অনেক খুশি। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো মার্কেটটি নির্মাণ করে দোকান হস্তান্তর করতে অন্তত তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়ে আমরা কোথায় যাব? কীভাবে ব্যবসা করব। কীভাবে টিকে থাকব। সিরাজুলের মতো ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ব্যবসায়ীরাও বলছেন, সিটি করপোরেশন যদি তাদের অস্থায়ীভাবে বসার জায়গার ব্যবস্থা করে দেয় তবে তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূূর তাপস ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখছেন। তার উদ্যোগেই এখন ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। নকশা তৈরির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েই নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে।