পদ্মা পাড়ের সব বিক্রি করে ঢাকা এসে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছি। ছেলেকে একটি দোকান করে দিয়েছিলাম এই মার্কেটে।
ভেবেছিলাম আবার নতুন করে পথচলার শুরু হবে। কিন্তু পাষণ্ড আগুন আমার স্বপ্নকে বাঁচতে দিল না। বাঁধতে দিল না ঘর।
এভাবেই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী বাবু বৈদ্যর মা সন্ধা বৈদ্য।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে পাঁচ শতাধিক দোকান। পুড়েছে শত শত মানুষের কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের দোকান।
এমনই এক দোকানি বাবু বৈদ্য। পদ্মার ওপারে বাড়ি। সব কিছু বিক্রি করে পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছেন রাজধানীর বুকে। এসেই রাজধানীর কৃষি মার্কেটে প্রায় আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দিয়েছেন দোকান। হঠাৎ ভোর রাত চারটার দিকে ফোনের শব্দে ভেঙ্গে যায় ঘুম। ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনেন মার্কেটে আগুন লেগেছে। সব ফেলে দৌড়ে এসেও বাঁচাতে পারেননি কোনো কিছু।
বাবু বৈদ্য বলেন, চারটার দিকে ফোন আসে। ফোন ধরতেই বলে মার্কেটে আগুন লেগেছে। শুনেই আমি দৌড়ে আসি। এসে দেখি মার্কেটে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। কিছুই বাঁচাতে পারিনি। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন কি নিয়ে বাঁচব?
তিনি বলেন, এখানে আমার দুইটি দোকান ছিল। দুইটি দোকানেই আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ গুড়া ও হলুদ গুড়া পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতাম। আগুনের কোনো কিছুই সরাতে পারি নাই। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
পোড়া দোকানে দাঁড়িয়ে বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ করছিলেন বাবু বৈদ্যর মা সন্ধা বৈদ্য। তিনি বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে দোকান করে দিয়েছিলাম। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এখন কিভাবে বাঁচব? কিভাবে ধার দেনা শোধ করব? কোথায় থাকব? কি খাব?
তিনি আরও বলেন, দেশ গাঁওয়ে সব বিক্রি করে ঢাকা চলে আসছি। ভাড়ার একটি বাসায় থাকি। দেশ থেকে যে টাকা আনছিলাম তা দিয়ে ছেলের দোকান করে দিয়েছিলাম। ধার দেনাও করেছি অনেক। আমার কিচ্ছু নাই সব শেষ।
কান্না করতে করতে সন্ধা বৈদ্য বলেন, আমার সর্বশেষ সম্বল ছিল বাড়ির ভিটা। সেটা বিক্রি করে আমার ছেলেকে দোকানে মালামাল তুলতে টাকা হাতে তুলে দিয়েছি। আমার ছেলের দোকানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটা মালও বের করতে পারি নি। আমার থাকার জায়গাটি বিক্রি করে দিয়েছিলাম স্বপ্ন দেখে। আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার যা সম্বল ছিল সব শেষ।
এরআগে, বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে একটি ইউনিট এলেও মার্কেট বন্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেনি সদস্যরা। যে কারণে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, পৌনে ৬ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। তিনি জানান, ভোরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ ইউনিট ও ১৩৭ জন কর্মী। আগুন নির্বাপণে এখনও আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অগ্নি নির্বাপণী সাহায্যকারী দল। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার অভিযান ও সার্বিক শৃঙ্খলায় ঘটনাস্থলে কাজ করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এনএসআই, স্কাউটের ভলান্টিয়ার সদস্যরা। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মার্কেটে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়।