জাতীয়

আবারও এনআইডির তথ্য ফাঁস: নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করা জরুরি

আবারও ফাঁস হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে থাকা নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য। শুক্রবার খবরে প্রকাশ, এ ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয়। ওই ঘটনায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে দায়ী করা হয়। এছাড়া সন্দেহভাজন হিসাবে ভূমি মন্ত্রণালয়কেও তথ্য সেবা দেওয়া বন্ধ রাখে ইসি। পরে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের শর্তে পুনরায় সেবাটি চালু করে দেওয়া হয়। এবার টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে তথ্য প্রকাশের পর আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য যাচাইয়ের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিকে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোসের নজরে আসে। মার্কিন অনলাইন পোর্টাল টেকক্রাঞ্চ এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশও করে; কিন্তু নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো চাঞ্চল্য দেখা যায়নি।

যেখানে তথ্যভান্ডারে বহু নাগরিকের নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের কোডসহ ৩২ ধরনের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ে, সেখানে ফাঁসের বিষয়টিকে কারিগরি ত্রুটি বলেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় মিটিয়ে ফেলেন। ফলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে শর্ষের ভেতরেই কি তবে ভুত ঢুকেছে? কর্তৃপক্ষের অগোচরে ভুয়া নাগরিকদের তথ্য সংযোজনই কি এর উদ্দেশ্য? তথ্য ফাঁসের আগের দফায় নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট), সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে তদন্তে নেমেছিল। সেই তদন্তে কে বা কারা এর নেপথ্যে ছিল, সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

নানা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর দেশের ১৮ কিংবা তার বেশি বয়সি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এর মাধ্যমেই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি বেচাকেনা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুবিধা ও সেবা পেতে হয়। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ১৭১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে ওই ভান্ডার থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাঁস হওয়া এসব তথ্যের অপব্যবহার হলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। মূলত তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষসমৃদ্ধ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের এ যুগে নাগরিকের এসব তথ্য বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গোপনীয় হিসাবে বিবেচিত হয়।

স্পর্শকাতর এ বিষয়টির সুরক্ষায় সব দেশই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অতীতে একাধিকবার বলা হলেও আমাদের দেশে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। সরকারের নিজস্ব সার্ভার তো বটেই, যেসব প্রতিষ্ঠান এই তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করে, তাদের সাইবার সিকিউরিটি শক্তিশালী কিনা তা খতিয়ে দেখা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এখন যত দ্রুত সম্ভব তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি এর পেছনে কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে বারবার তথ্য ফাঁস হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা খুঁজে বের করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *