জাতীয়

বসল ৩৭তম স্প্যান, দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর সাড়ে ৫ কিলোমিটার

মাঝ পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় আজ ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৭তম স্প্যানটি বসানো সম্ভব নাও হতে পারে- এমন শঙ্কা নিয়েই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। পরিস্থিতি অনূকূলে থাকায় অবশেষে দুপুর পৌনে ৩টার মধ্যে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩৭তম স্প্যানটি সফলভাবে দুই খুঁটির ওপর বসাতে সক্ষম হন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আর স্প্যানটি বসানোর পরই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো এখন ৫ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে খরস্রোতা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতুর) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো আব্দুল কাদের স্প্যান বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজই ৩৭তম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসানো সম্ভব হওয়ায় আরও একধাপ অগ্রগতি হলো পদ্মা সেতুর। শীতের আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক জেটি থেকে স্প্যানটি নিয়ে খুঁটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ৩ হাজার ৬০০ টন ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রেনবাহী ভাসমান জাহাজ তিয়ান-ই। আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যেই স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

তিনি জানান, এর আগে গত ৬ নভেম্বের সেতুর ৩৬তম স্প্যান বসানো হয়। তার ৬ দিনের মাথায় আজ বৃহস্পতিবার ৩৭ তম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসানো সম্ভব হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং শেষ হওয়ার সংশোধিত শিডিউল ২০২১ সালের জুন মাসে। আর চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ।

সূত্র মতে, পদ্মা সেতুতে ৪২টি খুঁটর ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৩৭টি স্প্যান বসানো হয়ে গেছে। বাকি থাকলো আর মাত্র ৪টি স্প্যান। ওই ৪টি স্প্যানের মধ্যে আগামী ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হতে পারে ‘১-এ’ নম্বরের ৩৮তম স্প্যান। ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটির ওপর ‘২-ডি’, নম্বরের ৩৯তম স্প্যান এবং মহান বিজয়ের মাসকে সামনে রেখে আগামী ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান ও ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খঁটির ওপর সেতুর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসানোর দিনক্ষণ নির্ধারণ রয়েছে। এই ৪টি স্প্যান নির্ধারিত দিনক্ষণে খুঁটির ওপর বসানো হয়ে গেলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর পদ্মা সেতুর মূল অবকঠামোর শতভাগ দৃশ্যমান হবে।

উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ২টি ডাঙায়। ডাঙায় থাকা দু’টি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ৬টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট বা ঝুলন্ত পথ ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক, আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *