রাজনীতি

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আ.লীগ ‘সন্ত্রাসবাদ’ চালাচ্ছে: রিজভী

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সন্ত্রাসবাদ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিএনপির চলামান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে সরকার ভীত ও শংকিত হয়ে পড়েছে। এজন্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় চিহ্নিত দলদাস সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্মীদের যৌথ ধ্বংসযজ্ঞ দেশজুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করবার জন্য জনবিচ্ছিন্ন সরকার অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রাখা।

তিনি বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের মানুষ আজ ফ্যাসিবাদের নির্মম নিষ্পেষণে একাধারে আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। ক্ষমতার মোহে আওয়ামী অপশক্তি সুপরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা করছে, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে। তারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সর্বত্র একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন অগ্নিসন্ত্রাসের ন্যক্কারজনক ইতিহাস রয়েছে। ধারাবাহিক অঘটনের মাধ্যমে, হাতেনাতে ধরা পড়ে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মীরা বারবার বিষয়টি দেশবাসীর সামনে নিজেরাই প্রমাণ করেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে, দুঃশাসনের নীলনকশা হিসেবে, পুলিশ হাজার-হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা, বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে। গত ৩ সপ্তাহে আমাদের ১৪ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে হত্যা, বোমা বিস্ফোরণ, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়াসহ নৃশংস অভিযোগের মাধ্যমে বিএনপির অহিংস ও শান্তিপূর্ণ ধারাবাহিক কর্মসূচিসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এসব প্রহসনমূলক মামলা ও রায়ে পুনঃপ্রমাণিত হচ্ছে দেশের বিচার ব্যবস্থার বিচারহীনতা ও নগ্ন দলীয়করণ; যা বছরের পর বছর ধরে চলছে।’

কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতিকারী কর্মীরা। তারা গণপরিবহণে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে, আর নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জ্বালাও-পোড়াও করে অপরাধীরা খুব সহজেই ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ছে। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অধিকাংশ ঘটনা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোষ্টের কাছাকাছি ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, কিভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ী। দেশের সর্বত্র র্যাবের শত-শত পেট্রোল টিম এ অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে পুলিশের পূর্ণাঙ্গ সুসংহত টহল। বাংলাদেশ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও বিরোধী দলের কোনো সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত হবে, এই দাবি সর্বত্রই হাস্যকর। বরং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হয়তো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেন তারা নিশ্চিন্তে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ছাত্রলীগের ৩ জন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ২ জন ছাত্রলীগ সদস্য ককটেল ও পেট্রোলবোমাসহ আটক হয়েছিল। একই সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা পেট্রোল বোমাসহ গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ দুজন যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল। ২০১৪ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহণে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যম মারফত জানা যায়। সেখানে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন এবং বাসে আগুন দিয়ে, পরিবহণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করে, মানুষ হত্যা করেছিল। শেরাটনের সামনে গানপাউডার মেরে বাসে আগুন দেওয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন করছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির ৪৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময়ে ১৫টি মামলায় ১ হাজার ৭২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৫ জন নেতাকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *