আন্তর্জাতিক

মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কী?

চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে আসন্ন এ নির্বাচনের আগেই বিপাকে পড়েছেন এবারের জনপ্রিয় প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন রায় ঘোষণা হওয়ায় এবার প্রশ্ন উঠছে সাব্যস্ত হওয়ার পরও কি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন ট্রাম্প? চলমান নির্বাচনি প্রচারের জন্য আদালতের ঐতিহাসিক এই রায়ের অর্থ তাহলে কী হতে পারে? বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব প্রশ্নের জবাব।

প্রথমত, প্রশ্ন উঠেছে এবার নির্বাচনে কি লড়তে পারবেন ট্রাম্প? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে এখনো লড়তে পারবেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য হতে যে তিনটি শর্ত রয়েছে এর মধ্যে দোষী সাব্যস্ত অপরাধীর বিষয়ে কিছু বলা নেই।

শর্তগুলো হলো: প্রথমত, প্রার্থীদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রার্থীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হতে হবে এবং তৃতীয়ত, প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। এলএ টাইমসকে প্রগতিশীল কনস্টিটিউশনাল একাউন্টিবিলিটি সেন্টারের সভাপতি এলিজাবেথ ওয়াইড্রা বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় কারাগারে থাকলেও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে এবং নির্বাচিত হতে কোনো কিছুই তাকে বাধা দিতে পারবে না।’ তবে ফোজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক বছর বা তারও বেশি সময় সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে মার্কিন জরিপবিদ ডগ শোয়েন বলেন, আট বছর আগের ঘটনায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। নির্বাচন হবে আগামী নভেম্বরে। ততদিনে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে বিষয়টির প্রভাব অতটা জোরালোভাবে নাও থাকতে পারে।

ভোটাররা নভেম্বরে যা ভাববেন, তা হলো মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত পরিস্থিতি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা, ইসরাইল ও ইউক্রেনে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে এসব বিষয়। অবশ্য রিপাবলিকান উইমেন ফর প্রোগ্রেসের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যারিয়েল হিল-ডেভিস বলেন, তিনি মনে করেন, এই বিষয়টি একজন প্রার্থী হিসাবে তার (ট্রাম্প) ওপর প্রভাব ফেলবে। তার ক্ষতির কারণ হবে। নির্বাচনের প্রভাব সম্পর্কে রিপাবলিকান পোলস্টার হুইট আইরেস বলেছিলেন, রিপাবলিকানদের এক-চতুর্থাংশই ট্রাম্পকে এড়িয়ে যাবেন বলে সন্দেহ করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে কিছু কিছু বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্পও বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এমনই একজন বিশ্লেষক বিল গ্যালস্টন। তার মতে, এ রায় প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিযোগিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টের নির্বাচনি প্রচারে কাজ করেছেন। গ্যালস্টন বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, এটি যৌনতা সম্পর্কে মিথ্যা বলার সমান। আমি মনে করি, বেশির ভাগ আমেরিকানই মনে করে প্রত্যেকেই যৌনতা নিয়ে মিথ্যা বলেন।’

আবার এ রায়ের পরও এতটুকু ভাটা পড়েনি ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায়। রক্ষণশীল ভাবধারার অনেক দাতা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসাবে দেখে থাকেন। ফলে নির্বাচনে রিপাবলিকান দাতারা ট্রাম্পের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও হটলিয়ার রবার্ট বিগলো।

বৃহস্পতিবারের রায় ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কিছু দাতাকেও তার পক্ষে অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করেছে। রবার্ট বিগলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থকদের একজন। ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া একটি গোষ্ঠীকে বিগলো এরই মধ্যে ৯০ লাখ ডলারের অনুদান দিয়েছেন। বিগলো বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার চলমান প্রক্রিয়া ‘মর্যাদাহানিকর’। রয়টার্সকে বিগলো বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট (সাবেক) ট্রাম্পের কাছে তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও ৫০ লাখ ডলার পাঠাচ্ছি।’

জ্যামাইকায় ট্রাম্পের সাবেক প্রতিনিধি ডন টাপিয়া বলেছেন, তিনি, একটি ছোট পারিবারিক নেটওয়ার্ক ও বন্ধুরা নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করতে আড়াই লাখ ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর টাপিয়া রয়টার্সকে বলেন, তাদের লক্ষ্য, ট্রাম্প সমর্থক গ্রুপ এমএজিএ ইনকরপোরেটকে ১০ লাখ ডলারের বেশি দেওয়া। তার জন্য তারা সবকিছু করবেন। রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী শন ম্যাগুয়ার ট্রাম্পকে সহায়তা করতে তিন লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *