বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তিনি।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চলছে। সেখানে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক-নার্স ছাড়া সবার প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফখরুল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।
পরে গণমাধ্যমকে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আজকে (শনিবার) দুপুর দেড়টায় ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখন তিনি সিসিইউতে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং চিকিৎসকরা এখন কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছেন না। আমি তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝলাম, ডাক্তারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, তার অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল। তারা আজকে (শনিবার) সন্ধ্যায় সম্ভবত আবার বোর্ড মিটিং করবেন এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা নির্ধারণ করবেন।
শুক্রবার গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়া হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেন। মেডিকেল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জোবায়েদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. জাহিদ বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ম্যাডামের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক যা করণীয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
খালেদা জিয়াকে সর্বশেষ গত ২ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় তাকে সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনির বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়র কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যান। পরে একই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিলে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সেই মাসেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৭ বছরের সাজা হয় তার। সেই থেকে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন তিনি। পরে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমটি হলো, তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। তখন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।