উন্নয়ন প্রকল্পের কেনাকাটার ক্ষেত্রে খেয়াল-খুশি মতো পণ্যের দরের নির্ধারিত তালিকা (রেট সিডিউল) পরিবর্তন না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রেট সিডিউল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আগাম অবহিত করতে হবে। প্রকল্প ব্যয়ে অপচয় এবং দুর্নীতি রোধে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতি পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী ড. অব্দুর রাজ্জাক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন দিকের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সাধারণত পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান একনেক বৈঠক শেষে ব্রিফিং করে থাকেন। তার অসুস্থতাজনিত অনপুস্থিতিতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সরকারের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম গত কয়েকটি একনেক ব্রিফিং করে আসছেন। গত সপ্তাহ থেকে তিনিও অসুস্থ রয়েছেন। তাদের দুজনের অনপুস্থিতিতে ড. শামসুল আলম ব্রিফিং করেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সংশ্নিষ্ট সচিবরাও প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে ড. শামসুল আলম আরও বলেন, নরসিংদী জেলার অন্তর্গত আড়িয়াল খাঁসহ কয়েকটি নদ-নদী পুনঃখন পকল্প প্রসঙ্গে রেট শিডিউল পরিবর্তনে এই অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। সংশোধিত এই প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এছাড়া স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ যথযথ ব্যবহার হচ্ছে কি-না সেটি তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাহাড়ি এলাকাসহ সারাদেশকে শতভাগ টেলি সেবার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্প প্রসঙ্গে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ কেনার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। এরমাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
একনেক বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানান, ইতোমধ্যে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ড. শামসুল আলম আরও বলেন, দেশে ব্যান্ডউইথের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। এছাড়া আগামী ২০২৫ সালে একটি সাবমেরিন ক্যাবল অকেজো হয়ে যাবে। সে বিবেচনায় এটি একটি সময়োপযোগী প্রকল্প। তিন হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
একনেকে দুই হাজার কোটি টাকার ৪ প্রকল্প অনুমোদন:
একনেকে দুই হাজার ১১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের অর্থায়ন এক হাজার ৪৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও বাকি ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন। ‘নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদী, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ পুনঃখনন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।