দেশকে ভালোবেসে দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিজিবির ৯৫তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এইটুকু বলব, দেশ ও জাতির প্রতি একটা সেবার মনোভাব নিয়ে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে।
“দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনারদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।”
মুক্তিযুদ্ধে সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে এবং বাহিনীর সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বাহিনীর তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা স্মরণে আনেন শেখ হাসিনা।
ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি। অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানি বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের উপর আমার আছে। মনে রাখতে হবে স্মাগলারের কোনো জাত নাই,ধর্ম নাই। তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এদেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।”
জাতির পিতার দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করি, এই নির্দেশনাটাও আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের যেমন সার্বভৌমত্ব রক্ষা,স্বাধীনতা রক্ষা পাশপাশি এই ধরনের অপকর্মগুলো রোধ করে আপনরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন। কারণ এই কথাগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক।”
শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে দেশ স্বাধীন হলে দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও বলেন তিনি।
বিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান উপলক্ষে শনিবার বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি চিত্রকর্ম উপহার দেওয়া হয়। ছবি: পি এম ওবিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান উপলক্ষে শনিবার বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি চিত্রকর্ম উপহার দেওয়া হয়। ছবি: পি এম ও
অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমাকে ভার্চুয়াল করতে হচ্ছে, সেটা করোনার কারণে। আমি জানি যে আমি এক জায়গায় যেতে গেলে সেখানে আরও অনেক মানুষকে যেতে হয়। কাজেই সকলে যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেই কথা চিন্তা করেই ভার্চুয়ালি আমরা করে যাচ্ছি।”
শীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের দেশের মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক, উন্নত জীবন পাক, সুন্দর জীবন পাক, সেটাই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, আমারও সেটা লক্ষ্য “
বিজিবি সদস্যরা যেভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বাহিনীর মূলনীতিগুলো মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজিবিকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি এই বাহিনীর সদস্যরা চোরাচালান, নারী পাচার, শিশু পাচারসহ সীমান্তে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ দমনে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি।
যে কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য শৃঙ্খলা বড় বেশি প্রয়োজন মন্তব্য করে নবীন সৈনিকদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ, কর্তব্য পালনে নির্ভিক থাকতে হবে। আবার অধস্তন যারা তাদের প্রতিও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
এই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন যোগ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ প্রান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলামসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।