জাতীয়

সরকারি সেবায় ঘুস দেন ৩২ ভাগ নাগরিক

সবচেয়ে বেশি ঘুস দিতে হয় বিআরটিএ অফিসে; এরপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাসপোর্ট ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে * নিজ বাড়ির আশপাশে সন্ধ্যার পর একা চলাফেরা করতে ভয় পান ১৫ শতাংশ মানুষ

গত এক বছরে যেসব নাগরিক সরকারি সেবা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুস-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮ দশমিক ৬২ এবং নারী ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বিআরটিএ। এখানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষকে ঘুস দিতে হয়েছে। এরপরই রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (৬১.৯৪), পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫) এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস (৫৪.৯২ শতাংশ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের (সিপিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন না প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ। আর নিরাপদ বোধ করেন ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক। বৃহস্পতিবার জরিপ (সার্ভে) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিবিএস-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব। প্রশ্নোত্তর-পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব দীপঙ্কর রায়। জরিপটি পরিচালনা করেছে বিবিএস। ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি শিক্ষাক্ষেত্রেও কম হচ্ছে না। আমি দেখেছি, বদলি নিয়ে রীতিমতো ঘুস বাণিজ্য চলে। গোয়েন্দা দিয়ে আমি দেখেছি, এখানে এত মাধ্যম ব্যবহার করা হয় যে আসল দুর্নীতিবাজকে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক বৈষম্য নেই। জরিপে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে পুরুষদের (৮৯.৫৩ শতাংশ) তুলনায় নারীরা (৮০.৬৭ শতাংশ) কম নিরাপদ বোধ করেন। শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ (৮৩.৭৫ শতাংশ) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের তুলনায় কিছুটা কম (৮৫.৩০ শতাংশ) পরিলক্ষিত হয়।

২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশ মনে করে, তারা মতামত দিতে পারে না। ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এ হার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৮ এবং ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ নাগরিকের মতে, ওই স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থ্যরে মধ্যে ছিল।

শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থ্যরে মধ্যে ছিল বলে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচারব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা বেশি, যা ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে তা ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার (২২.০১) গ্রামাঞ্চলের (১৮.০৭) তুলনায় বেশি। নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৮.৪৪), গণপরিবহণ/উন্মুক্ত স্থানে (৩১.৩০) এবং কর্মস্থলে (২৫.৯৭ শতাংশ) বৈষম্য/হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন বলেও জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *