আন্তর্জাতিক

মিল্কি ওয়ের সর্পিল বাহুর প্রভাব রয়েছে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে ?

আমাদের সৌরজগত যখন মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের ভেতর দিয়ে চলেছে সেই মহাজাগতিক ভ্রমণও এর পেছনে প্রভাব ফেলতে পারে।

পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের সর্পিল বিভিন্ন বাহু। নতুন গবেষণা বলছে, পৃথিবীর ইতিহাস কেবল পাথরেই নয়, লেখা রয়েছে বিভিন্ন তারার মধ্যেও।

‘কার্টিন ইউনিভার্সিটি’র নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর ভূত্বক যেভাবে গঠিত হয়েছে, তা কেবল পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক শক্তির কারণে নয়, বরং আমাদের সৌরজগত যখন মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের ভেতর দিয়ে চলেছে সেই মহাজাগতিক ভ্রমণও এর পেছনে প্রভাব ফেলতে পারে।

এ গবেষণায় ‘জিরকন’ নামের খুব ছোট তবে শক্তিশালী স্ফটিক নিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাটি শিগগিরই প্রকাশ পাবে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ রিচার্স’-এ।

এসব স্ফটিকের মধ্যে কিছু পৃথিবীর চেয়েও পুরানো। এগুলো যেন সময়ের ছোট বাক্স, যা কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর ভূত্বকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনের চিহ্ন ধরে রেখেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

জিরকন স্ফটিকের রাসায়নিক তথ্যের সঙ্গে আমাদের মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের গ্যাসের তারামণ্ডল মিলিয়ে দেখেছেন গবেষকরা, যেখানে এক চমকপ্রদ বিষয় লক্ষ্য করেছেন তারা।

গবেষকরা বলছেন, স্ফটিকে যেসব পরিবর্তনের সময় পাওয়া গিয়েছে তা ঠিক সেই সময়ের সঙ্গেই মিলেছে, যে সময়ে আমাদের সৌরজগৎ মিল্কি ওয়ের সর্পিল বাহুগুলোর ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছিল।

ছায়াপথের এসব সর্পিল বাহু বিভিন্ন তারা, ধূলিকণা ও গ্যাস দিয়ে জমে থাকা ঘন এক জায়গা। আমাদের সৌরজগত যখন এসব সর্পিল বাহুর মধ্য দিয়ে গিয়েছে তখন শক্তিশালী মহাকর্ষীয় শক্তি হয়ত আশপাশে থাকা বরফে ঢাকা বিভিন্ন ধূমকেতুদের চলাচলে প্রভাব ফেলেছে।

তখন কিছু ধূমকেতু নিজেদের পথ থেকে সরে গিয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে শুরু করে। গবেষণার প্রধান অধ্যাপক ক্রিস কার্কল্যান্ড বলেছেন, মহাজাগতিক এসব সংঘর্ষের ফলে অনেক বিপুল পরিমাণে শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে।

“পৃথিবীর পৃষ্ঠের কিছু অংশ গলিয়ে দিয়ে জটিল ধরনের আগ্নেয়গিরির দহন বা ম্যাগমা তৈরি করেছে এসব সংঘর্ষ।”

এসব সংঘর্ষ যখন পৃথিবীর পানিওয়ালা অঞ্চলের সঙ্গে এসে মিশেছ তখন তা হয়ত পৃথিবীর মহাদেশীয় ভূত্বক গঠনের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, যা আজ আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তার ভিত্তি তৈরি করেছে বলে দাবি গবেষকদের।

বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান, পৃথিবীর ভূত্বকের গঠন প্রধানত আগ্নেয়গিরি ও প্লেট টেকটোনিকসের মাধ্যমে হয়েছে, যেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এ নতুন ধারণা। কারণ নতুন গবেষণার ফলাফল বলছে, আমাদের পৃথিবীর বিকাশে ছায়াপথের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

জিরকনের এসব স্ফটিককে ‘পৃথিবীর ছায়াপথের সঙ্গে যোগাযোগের অনন্য এক সংরক্ষণাগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অধ্যাপক কার্কল্যান্ড।

তিনি বলেছেন, পৃথিবী বিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবার সুযোগ দিয়েছে গবেষণার এসব ফলাফল। “আমাদের গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক বিকাশকে আমরা আলাদা করে ভাবতে পারি না, ছায়াপথের পরিবেশও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

গবেষণাটি নতুন এক রোমাঞ্চকর ভবিষ্যতের দিকেই ইঙ্গিত করে, যেখানে ভূতত্ত্ব ও জ্যোতির্বিজ্ঞান একসঙ্গে মিশে ‘অ্যাস্ট্রো-জিওলজি’ নামে নতুন এক শাখা গড়ে তুলতে পারে।

পৃথিবীর ভূত্বকের পরিবর্তনকে আমাদের সৌরজগতের মিল্কি ওয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রার সঙ্গে যোগ দিয়ে গবেষকরা দেখতে শুরু করেছেন, কীভাবে মহাজাগতিক ঘটনা প্রাণ তৈরির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছে।

গবেষকরা বলছেন, আমাদের পায়ের নিচে থাকা বিভিন্ন মহাদেশ কেবল আগ্নেয়গিরি ও প্লেটের নড়াচড়ার ফল নয়। এসব মহাদেশ হয়ত আমাদের ছায়াপথের দেওয়া উপহারও, যা প্রাচীন মহাজাগতিক যাত্রা ও বিস্ময়কর সংঘর্ষের কারণে তৈরি হয়েছে এবং পৃথিবীতে গভীর চিহ্ন রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *