“এই বয়সে এসে যদি আমাদের বাদ দেওয়া হয়, আমরা যাব কোথায়? অন্য কোথাও তো চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই,” বলেন এক চিত্রগ্রাহক।
সাত দশক আগে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে যে সংস্থা যাত্রা করেছিল, সেই এফডিসি’র মুখ থুবড়ে পড়েছে নানা অব্যবস্থাপনা আর সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে।
গত এক দশকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ঋণজালে পড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে নতুন করে আর অনুদান না দিয়ে বিকল্প উপায়ে সচল রাখার উপায় খুঁজছে সরকার।
২০১৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকারের কাছ থেকে অনুদান আর ঋণ বাবদ প্রায় ৮০ কোটি টাকা নিয়েছে এফডিসি। বছর বছর সংস্থাটির লোকসান ও ব্যয় বাড়ছে; অদূর ভবিষ্যতে যে আয়-উন্নতি হবে— তেমন আভাসও মিলছে না।
এর মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলে চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সরকারের কাছে ১১৮ কোটি টাকার অনুদান বা থোক বরাদ্দের আবেদন করেছে এ লোকসানি করপোরেশন।
এর মধ্যে সংস্থাটিকে লাভজনক করতে উপায় খুঁজছে সরকার। গেল ৯ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এফডিসির জায়গা সম্পদের বিকল্প ব্যবহার এবং সেখানে কর্মরতদের একাংশকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, এফডিসিকে লাভজনক করতে করপোরেশন ভেঙে দিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে পরিচালনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ খাতের সফল উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হবে।
অবশ্য এফডিসির তরফে এমন প্রস্তাবে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দুর্নীতির’ দায়ভার এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনার নিতে চাইছে না। তারা সংস্থাটিকে লাভজনক করার কয়েকটি সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি সম্প্রতি বলেন, “গত ১৬ বছরে এফডিসির আধুনিকায়নে কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি। বিগত দিনের অনেক নেতৃত্ব এফডিসিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির বিপরীতে প্রতিবেশী দেশের সংস্কৃতিকে বাজার ধরায় সহায়তা করেছেন।
“আধুনিক প্রযুক্তির অপ্রতুলতা, জরাজীর্ণ স্টুডিও, অপ্রতুল সরঞ্জাম ও সংস্কারের অভাবে এফডিসি দিন দিন অতীতের সোনালী গৌরব হারিয়েছে।”
এফডিসির হিসাব শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৭ সালে যাত্রা করা এফডিসি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়েছিল ১৯৯৯-২০০০ সালে; যার পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। তবে এরপর থেকেই রাজস্ব দেওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে।
আর ২০১৬ সাল থেকে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। অব্যবস্থাপনা আর সময়ের সঙ্গে খাপ খাইতে না পেরে একসময়ের জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাস্তবতার নিরিখে এফডিসিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা না করে ‘বিকল্প চিন্তা’ করা হলে তা ‘অবিচার’ হবে বলে মনে করেন সংস্থার বর্তমান এমডি মাসুমা রহমান তানি।
তিনি বলেন, “কেবল ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু, আর শুটিং স্পটগুলো সঠিক মূল্যে ভাড়া দিতে পারলেই যে আর্থিক সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে তা আমি গত অগাস্ট মাসের পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছি।
“আর আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি যুক্ত হলে এফডিসিকে আবারও লাভজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এখানে অন্য কোনো চিন্তা করা ঠিক হবে না।”
নিজের ভাবনার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে এমডি তানি বলেন, “চলতি বছরের অগাস্টে এফডিসির পরিচালন আয় ২৪ লাখ ৭১ হাজার ২৩২ টাকায় উন্নীত করতে পেরেছি, যা আগের বছর অগাস্টে ছিল ১২ লাখ ২৭ হাজার ৩৭০ টাকা ৬৫ পয়সা।
“এ থেকে বোঝা যায় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে এফডিসিকে অচিরেই লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
একদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অন্যদিকে এফডিসিতে একবেলা শুটিংয়ের যে খরচা— তার চাইতে কম টাকায় বাইরে কাজ করারি সুযোগ থাকায় এফডিসি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন পরিচালক-প্রযোজকরা। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর সেবা মূল্য কমিয়েছে এফডিসি।
সংস্থার এমডি মাসুমা রহমান তানি বলেন, পরিচালকরা যেন কম টাকায় আন্তরিকতার সঙ্গে শুটিং করতে পারেন, সেই সঙ্গে এফডিসির আর্থিক অবস্থারও যাতে উন্নতি হয়— সেই উদ্দেশ্য মূল্যহার কমানো হয়েছে।
“আমরা আমাদের সার্ভিসের রেট কার্ড মূল্য সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে শুরু করে দুই-তিন হাজার টাকা মূল্য কমিয়ে এনেছি। নিয়মগুলো সহজ করে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছি, যেন সিনেমা বানানো বা যেকোনো নির্মাণ যেন নির্মাতাদের জন্য সহজ হয়।”
এফডিসি যেন ‘ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার’
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য ধরেই এফডিসির বর্তমান অবস্থা কেমন, তা জানতে কয়েকদিন ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, এফডিসির ১, ২, ও ৭ নম্বর—এই তিনটি ফ্লোর কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত। কেউ সিনেমার জন্য নতুন সেট তৈরি করছেন, কেউ আগের সেট খুলে নিচ্ছেন। তবে এই ফ্লোরগুলোর দশা অনেকটাই বেহাল।
আলাপচারিতায় সেটের কাজ করা কর্মীরা জানালেন, বৃষ্টি হচ্ছে, তাই ফ্লোরের ছাদ থেকে পানি পড়ছে; এসি নষ্ট।
তেজগাঁওয়ে সাড়ে ৭ একর জায়গার ওপর এফডিসির এই প্রধান কার্যালয়। আগে এখানে ছিল নয়টি শুটিং ফ্লোর, পুকুর, বাগান, সুইমিংপুল, কৃত্রিম ঝরনা, জমিদার বাড়ি এবং নানা শুটিং স্পট।
কিন্তু এখন শুটিংয়ের উপযুক্ত স্থান বলতে রয়েছে কেবল প্রশাসনিক ভবনের সামনে আর ঝরনা স্পটের আশপাশের খোলা জায়গাটুকু। বাকি সব জায়গা অনেকটা দুর্দশাগ্রস্ত; এই যেমন যে জমিদারবাড়ি আগে সিনেমায় ‘ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়ি’ হিসেবে ব্যবহৃত হত, সেটি দীর্ঘদিন পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। পুকুরের পানি আবর্জনায় ভরা, কৃত্রিম ঝরনাটিও অকেজো হয়ে গেছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর এফডিসিতে গিয়ে দেখা গেল, দুটি সিনেমার শুটিং চলছে। রায়হান রাফীর ‘আন্ধার’ সিনেমার শুটিং চলছে নাজির আহমদ সাউন্ড কমপ্লেক্সের সামনে; আর বদিউল আলম খোকনের ‘তছনছ’ সিনেমার শুটিং চলছে প্রশাসনিক ভবনের সামনের চত্বরে।
এফডিসির কর্মকর্তারা জানালেন, রাফীর ‘আন্ধার’ সিনেমার শুটিং চলেছে ২০-২৫ দিন ধরে। এর মধ্যে কিছুদিন হয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কবিরপুরে, বাংলাদেশ ফিল্ম সিটিতে। আর ‘তছনছ’ সিনেমার শুটিং চলছে ১০-১২ দিন ধরে।
এফডিসিতে শুটিং করতে গিয়ে কেমন সেবা পাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে রায়হান রাফী বললেন, “নানান ধরনের অসুবিধা আমাদের হচ্ছে। ফ্লোরে এসি নেই, আমাদের এসি লাগিয়ে নিতে হচ্ছে। কারণ শিল্পীরা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কবিরপুরে শুটিং করেছি, কিন্তু সেখানে যাতায়াতের রাস্তা নেই। আমাদের অনেক কষ্ট করে রাস্তা তৈরি করে নিতে হয়েছে। এমন নানান অব্যবস্থাপনা রয়েছে।
“তবে এফডিসির অবস্থা আগে থেকে কিছুটা ভালো। শুটিং করতে হলে যে নিয়মের বেড়াজাল ছিল, সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এখনকার পরিচালক (এমডি) চেষ্টা করছেন আমাদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে। এত বছরের অব্যবস্থাপনা তো খুব দ্রুত কেটে যাবে না, সময় লাগবে। তবে এফডিসির নিজস্ব আয়ে চলতে হলে আমি মনে করি কবিরপুরকে উন্নত করা যেতে পারে।”
এফডিসির উৎপাদন বিভাগের রেট কার্ড অনুযায়ী, সংস্থাটির আয়ের উৎস হচ্ছে স্পট ভাড়া (সেট নির্মাণ ও শুটিংকালীন)। এই স্পটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ফ্লোর, স্টুডিও চত্বর, কড়ইতলা, এডিটিং মাঠ, বাগান, ক্যান্টিন, গ্যারেজ, ভবনের ছাদ, স্টল, লবি, করিডোর, মেডিকেল সেন্টার, ঝরনা স্পট, ভিআইপি প্রজেকশন হল, কালার ল্যাবে শুটিং।
তাছাড়া ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি ভাড়া, ক্যামেরার যন্ত্রপাতি ভাড়া, লাইট ভাড়া, সেট ম্যাটেরিয়াল, এডিটিং চার্জ, শব্দ, টেলিসিনে মেশিন ভাড়া, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ভাড়া, ফুল ভাড়া, ল্যাবরেটরি ভাড়া দিয়েও আয় হয় সংস্থাটির। এছাড়া কবিরপুর ফিল্ম সিটি ভাড়া দিয়ে এফডিসি আয় করে থাকে।
এই রেট কার্ড অনুযায়ী এফডিসিতে পরিচালকদের কতটা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, জানতে চাওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত পরিচালক (উৎপাদন) জানে আলমের কাছে।
তিনি বলেন, “উৎপাদন শাখার অধীনে রয়েছে ক্যামেরা ও লাইট শাখা, শব্দ শাখা, এডিটিং শাখা, ফ্লোর ও সেট শাখা। ২০১৬ সালে সর্বশেষ আমরা যন্ত্রপাতি পেয়েছিলাম।
“প্রায় ৯ বছর ধরে নতুন কোনো সরঞ্জাম আনা হয়নি, ফলে আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি।”
এফডিসিতে বর্তমানে কাজের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই জানিয়ে জানে আলম বলেন, “আমাদের ক্যামেরা ছিল ৮টি; সনি এফ-৫৫ মডেল, রেড ড্রাগন, রেড স্কারলেট (মডেলের) ক্যামেরা। এখন শুধু সচল আছে সনি এফ-৫৫ মডেলের তিনটি ক্যামেরা। বাকিগুলো নষ্ট, তবে মেরামতযোগ্য।
“ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের জন্য ৫ দশমিক ১ সাউন্ড সিস্টেম সফটওয়্যার নষ্ট অনেক বছর ধরে। ডাবিং মেশিন নষ্ট, সাউন্ড মিক্সিংয়ের দুইটি মেশিন ছিল; সেগুলো অনেক আগে থেকেই নষ্ট। ৫.১ বা ৭.১ সারাউন্ডিং সাউন্ড সিস্টেম নেই।”
ফ্লোরগুলোর অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “ফ্লোরগুলোর অবস্থাও ভালো না। বিএফডিসি কমপ্লেক্স তৈরি করার জন্য ৩টা ফ্লোর (৩, ৪ ও ৫) ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি ৮ ও ৯ ফ্লোর মোটামুটি ভালো আছে। বাকি ফ্লোরগুলো সংস্কার করতে হবে। পানি পড়ে, এসি নষ্টসহ নানান অসুবিধা আছে।
“এডিটিং শাখার মেশিনগুলো অচল, এডিটিং তো সফটওয়্যারের মাধ্যমে, এগুলো ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। ডিসিপি (ডিজিটাল সিনেমা প্যাকেজ) মেশিন নষ্ট। ক্রিস্টি প্রজেক্টর মেশিন কোনো কাজে লাগেনি। ভিজ্যুয়াল এফেক্টের কাজের সুবিধা নেই। ২০০৭ সাল থেকে ডিজিটাল সাউন্ড ইকুইপমেন্টের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল কিন্তু সেগুলো মামলা ঝামেলায় ব্যবহার করা হয়নি। এগুলো এখন অকেজো, ব্যবহারযোগ্য নয়। দুইটি জিমি জিব ক্রেইন (৪০ ফুট) থাকলেও তা চালানোর জন্য দক্ষ জনবল নেই।”
৯ বছরে কেন উন্নয়ন হয়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, “নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হলে রাজস্ব খাত থেকে অর্থ লাগে। কিন্তু সেই সামর্থ্য এফডিসির নেই। তাই যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।”
নিজস্ব আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব কি না? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “ঢাল নাই, তলোয়ার নাই—নিধিরাম সর্দারের মতো বললেই তো আয় করা যায় না। আধুনিক যন্ত্রপাতি, লজিস্টিক সাপোর্ট আর দক্ষ লোকবল পেলে আগের মত আয় করা সম্ভব।”
এফডিসির ব্যয়ের খাত হিসেবে রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা, গ্রাচুয়িটি, পানি, বিদ্যুৎ, পৌরকর, আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন নে খরচ, ব্যাংক ঋণের সুদ, অনুষ্ঠান, উৎসব, বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক ব্যয়, বই ও সাময়িকী, অন্যান্য স্টেশনারি সামগ্রী, ইন্টারনেট, কম্পিউটার সামগ্রী ব্যয়, নিরীক্ষা ফিসহ বেশ কিছু খাত।
এফডিসিতে দেখা মিলল তিন শতাধিক সিনেমার কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ রচয়িতা, নির্মাতা ছটকু আহমেদকে। ৮০ বছর বয়সী এ চলচ্চিত্রকারের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। সেই বছর তিনি ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
এফডিসির একসময়ের জৌলুস যে হারিয়ে গেছে, সেই স্মৃতি হাতড়ে খেদ প্রকাশ করলেন ছটকু আহমেদ।
তার ভাষ্যে, “আগে ফ্লোরগুলোতে সারা দিন-রাত কাজ চলত। আমরা শিডিউল পেতাম না। এডিটিং রুম ব্যস্ত থাকত, ডাবিংয়ের শিডিউল পেতাম না। লোকে গমগম করত। সিনেমা যে সবার— সেটা বোঝা যেত।
“কাদের দারওয়ান ছিল, সে হিমশিম খেয়ে যেত মানুষের ভিড়ে। এখন কিছুই নেই, নির্জীব। যুগে যুগে সবই পরিবর্তন হয়, এফডিসিরও সেই পরিবর্তন দরকার ছিল।”
লোকসানের পাহাড়
এফডিসির হিসাব শাখার তথ্যানুযায়ী, করপোরেশন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও সেবা খাত থেকে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫৭ টাকা ২১ পয়সা আয় করেছিল। সেই বছর বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদ খরচ হয়েছে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৪ টাকা।
পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে করপোরেশন আয় করেছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৭৫ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার ৪০২ টাকা ৫০ পয়সা। ঘাটতির বাকি টাকা আনতে হয় সরকারের কাছ থেকে।
এফডিসির অ্যাকাউন্টস অফিসার হেমায়েত হোসেন জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে কর্মীদের বেতন ভাতা, গ্র্যাচুয়িটি মিলিয়ে এফডিসি অনুদান পেয়েছে ৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, এসময়ে ৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ঋণও করতে হয়েছে।
তার মানে এক দশকে সরকারের অনুদান ও ঋণ মিলিয়ে ৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা নিতে হয়েছে এফডিসিকে।
সংস্থার ২০২১-২২ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক লোকসানের পরিমাণ ১৪২ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৭ টাকা। নিরীক্ষার সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ১৩ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদের তুলনায় দায় ছিল অনেক বেশি।
“এই পরিস্থিতি বলছে, প্রতিষ্ঠান সীমাহীন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ফলে এটি সামনের দিকে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে সরকারের সহায়তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে চলা সম্ভব নয়,” বলা হয় নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী সম্পদ বা ভূসম্পত্তি কিন্তু কম নয়। করপোরেশনের সম্পত্তি শাখার হিসাব অনুযায়ী, তেজগাঁও বেগুনবাড়ি মৌজায় (প্রধান কার্যালয়) রয়েছে ৭ দশমিক ৬৩২৪ একর জমি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সখিপুরে (বাংলাদেশ ফিল্মসিটি) ১০৫ দশমিক ৫৭৭ একর জমি রয়েছে।
এছাড়াও মিরপুরের ভাষানটেকে রয়েছে এক একর জমি, চট্টগ্রামের এফডিসির বর্ধিত শুটিং ইউনিট তৈরির জন্য বিটিভি চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৭ একর। এই জায়গা দুইটি এখন পর্যন্ত কোনো কাজে লাগাতে পারেনি এফডিসি।
এফডিসির সম্পত্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা
বছরে অর্ধশত কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর ধরা হলেও নির্মাণকাজই শুরু হয় ২০২২ সালে। ১২তলা বিশিষ্ট এ কমপ্লেক্সের এখন পর্যন্ত উঠেছে ১০ তলা। সবশেষ সংশোধনীর মাধমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন ঠিক করা হয়েছে, ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত ভৌতকাজের অগ্রগতি ৪৬.৫৩ শতাংশ।
এ প্রকল্পের অগ্রগতি যে মোটেই সন্তোষজনক নয় তা ২০২৪ সালের জুনে নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। অর্থছাড়ে বিলম্ব, প্রকল্পের কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করা, প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগে ব্যর্থতা, বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়ন না করা, নিয়মিত নজরদারি না করা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ভবনের পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত নকশা সংযোজিত না থাকার মতো ভিসয়কে দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপিপি অনুযায়ী, তৃতীয় পে-গ্রেডের একজন ইঞ্জিনিয়ারের প্রকল্প পরিচালক হওয়ার কথা, তবে তা হয়নি। কোনো প্রকল্প পরিচালকের মেয়াদ ছিল তিন মাস, কারও পাঁচ মাস, কেউ এক বছর বা তিন বছর, তা ছাড়া নির্মাণকাজে বিভিন্ন গ্রেডের রডের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য না। গভীর নলকূপ নির্মাণ করতে গিয়ে প্রকল্পের একাংশের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্মাণাধীন কমপ্লেক্সে একটি সিনেপ্লেক্সে তিনটি স্ক্রিন বা হল থাকবে; সুইমিং পুল থাকবে একটি। তিনটি শুটিং ফ্লোর, ছয়টি মেকআপ রুম, স্যুভেনির শপ, ফুড কোর্ট, জাদুঘর, লাইব্রেরি, ডান্সিং ফ্লোর ও নাট্যমঞ্চ থাকবে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের জন্য থাকবে শিশুদিবাযত্ন কেন্দ্র; অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের কর্নার। ভিএফএক্স স্টুডিওসহ পোস্ট–প্রোডাকশনের আধুনিক সুবিধা। দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রনির্মাতা, কলাকুশলী ও পর্যটকদের জন্য আবাসিক হোটেল। থাকবে খেলার জায়গা, প্রবীণদের গল্প করার জায়গা ও সেমিনার হল। অফিসসহ ভবনের কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব বলে মনে করেন এফডিসির এমডি মাসুমা রহমান তানি।
তিনি বলেন, “আমাদের যা আছে, এগুলো ঠিকঠাক করে দিক, রেনোভেট করে দিক, ইকুইপমেন্টগুলো আধুনিক করে দিক। আর বিএফডিসি কমপ্লেক্সের কাজ যত দ্রুত শেষ করা যায়।
“তাহলে এতদিন ধরে এফডিসি যে লস দিয়ে দিয়ে চলছে, ভর্তুকি দিচ্ছে, ঋণ দিচ্ছেন সরকার, এই ঋণটা সহ আমরা তাদেরকে প্রফিট দিতে পারতাম।”
এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কবিরপুরে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। সেখানে একটি স্পটে সেট নির্মাণ ও শুটিং, ডুপলেক্স বাড়ি, উচ্চ ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি, গ্রামীণবাজার, পুকুর ও বাগান সুবিধা রয়েছে।
এখন ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুমোদন চাইছে এফডিসি। এ প্রকল্পে থাকবে শিল্পীদের শুটিংয়ের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। আধুনিক শুটিং স্পট, ফ্লোর, ভিএফএক্স, যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও সুবিধা থাকারও কথা।
‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’র ভাবনা
এফডিসির অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৯১টি, তার বিপরীতে এখন কাজ করছেন ১৯৩ জন। সেলুলয়েড যুগের এসব কর্মীর বেশিরভাগই ডিজিটাল বা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারেননি। ফলে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ৯২ জনকে এককালীন অর্থ দিয়ে বিদায় দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ৯ সেপ্টেম্বরের সভায় ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ নিয়েও আলোচনা হয়।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “এফডিসিতে কর্মরতদের বড় একটি অংশ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। ফলে তাদেরকে দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই বিবেচনায় যারা এককালীন সুবিধা নিয়ে চলে যেতে ইচ্ছুক, তাদেরকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
“তবে এখানে কাউকে জোর করে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে না। সেখানে তাদেরকে বলা হবে যে আপনি চাকরি ছাড়লে এমন সুবিধা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিই তার করণীয় ঠিক করবে। এ নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হবে।”
এফডিসির তথ্য অনুযায়ী, ৯০ জন কর্মচারীকে অবসরোত্তর সুবিধা দিতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর অবসরে চলে যাওয়া ৫৪ জনের অবসরোত্তর পাওনাদি পরিশোধ প্রয়োজন ১৩ কোটি টাকা।
গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের তালিকায় থাকা অন্তত ১০ জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে ,তারা সবাই এই প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অডিট অফিসার হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমাদের কোন প্রক্রিয়ায় গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়া হচ্ছে, আমরা এখনো জানি না। এর আগে পাটকল করপোরেশনে বিশেষ সুযোগ দিয়ে কর্মীদের অবসরে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের ক্ষেত্রে কী সুবিধা দেওয়া হবে, সেটাও অজানা।
“আগামী বছর সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে স্কেল কার্যকর হলে বেতন বাড়বে, তাতে অবসর সুবিধাও দ্বিগুণ হবে। আমার চাকরির বয়স এখনো কয়েক বছর বাকি। এখন যদি আমাকে অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই এই গোল্ডেন হ্যান্ডশেক আমি চাই না।”
পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) মামুনূর রশীদ বলেন, “এটা করা হলে অভিজ্ঞ কর্মচারীদের বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হবে, এতে এফডিসির সক্ষমতা আরও কমে যাবে, ক্ষতি বাড়বে। আমার মতে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত এফডিসি বিলুপ্তির প্রাথমিক ধাপ। এফডিসির অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৯১টি, এখন কাজ করছে ১৯৩ জনের মত।
“এর মধ্যে যদি আরও ১০০ জন বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার মত কর্মীই থাকবে না। তাই আমি মনে করি লোক কমানোর বদলে শূন্য পদ পূরণ করা উচিত। আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগ, যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি আমদানি এবং পুরনো কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিলেই এফডিসির অবস্থার উন্নতি সম্ভব।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী পরিচালক বলেন, “আমরা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সঙ্গে একমত নই। এই করপোরেশনে অনেক বছর ধরে চাকরি করছি। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন।
“আমার চাকরির বয়স ২৫ বছর হলেও আমি আরও ১০ বছর কাজ করতে পারি। এই সময়টায় বেতন ও ইনক্রিমেন্ট বাড়বে, গ্রাচুয়িটি বাড়বে, আরও সুবিধা পাব। তবে যদি সরকার সব পাওনা একসঙ্গে এক চেকের মাধ্যমে দেয়, তাহলে আমরা যেতে রাজি।”
আরেক কর্মকর্তা বলেন, “এই গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা উচিত। সেই কমিটি যাচাই করবে কে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ (অ্যাসেট) আর কে বোঝা (বারডেন)।
“বিদায়ী কর্মীদের যেন কেউ কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।”
সহকারী চিত্রগ্রাহক ও জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, “আমাদের পরিবার এখন চিন্তায় আছে। এই বয়সে এসে যদি আমাদের বাদ দেওয়া হয়, আমরা যাব কোথায়? অন্য কোথাও তো চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই।
“আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আছে। এত বছর কষ্ট করার পর এখন এসে শুনছি চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া হবে এটা আমরা মেনে নিতে পারব না।”
এফডিসি কর্মকর্তারা জানান, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছেন ১০ জন। তার মধ্যে ১৩ ও ১৫ তম গ্রেডের আছেন তিনজন করে, ১৬ তম গ্রেডের ২ জন এবং ১৭ ও ১৮ তম গ্রেডের একজন করে আছেন।
কী বলছেন অংশীজনরা?
এফডিসির বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারি সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, “গত ৯ সেপ্টেম্বর যে সভা হয়েছে, সেটাতে কার্যকরী কোনো সমাধান বা সিদ্ধান্ত আসেনি। যতটুকু জানি সেখানে কিছু অসংগতি বা অবজেকশন ছিল।
“গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার বিষয়টি ঠিক আছে, সরকারি নীতিমালায় যেহেতু অনেকে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে, যদি কেউ ইচ্ছায় অবসরে যেতে যান, তাহলে সে যাবে। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।”
এফডিসিকে লাভজনক করতে অতীতের উদ্যোগগুলো কাজে না আসায় সরকারের নতুন পরিকল্পনাতে আস্থা রাখতে পাচ্ছেন না খসরু।
তিনি বলেন, “আগেও বহুবার পাবলিক প্রাইভেট পার্টশিপ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ফলাফল আমরা পাইনি। বিগত দিনে এফডিসিতে উন্নত করতে অনেকগুলো প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছিল।
“বিএফডিসি কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু প্রজেক্ট চালুও হয়েছিল। সেগুলোর আসলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই; আমরা মনে করি, যে উদ্দেশ্যে এতসব প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে- এগুলো আসলে আশানুরূপ কোনো ফল দিতে পারবে।”
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন সুমন বলেন, “এফডিসি নিয়ে যে কোনো বিরূপ সিদ্ধান্ত আসলে আমরা গঠনমূলকভাবে পদক্ষেপ নেব। শুনেছি এফডিসির জায়গা বিক্রি করে দায় মেটানোর চিন্তা হচ্ছে। এখানে চলচ্চিত্রের অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে।
“যে কেউ এসে যা মন চায়, তা সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। কেউ চাইলেই জায়গা বিক্রি করে দেবে, এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত তো হতে পারে না। আমরা তো চুপ করে বসে থাকব না।”
এফডিসিকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় ‘লুটপাটের’ আঁচ পাচ্ছেন শাহীন সুমন।
তিনি বলেন, “যারা এফডিসিকে পাবলিক পাইভেট পার্টনারশিপে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করে তারা ফায়দা লুটার চিন্তা থেকে এসব করছে।
“এই সরকারের তো অধিকার নেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সরকার তো নির্বাচিত সরকার না।”
এফডিসি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেখানে এফডিসিকে লাভজনক বা সম্পদের বিকল্প ব্যবহার বলতে তারা কী বোঝাচ্ছে? এসব করে তো আমাদের একটা জায়গা নিয়ে গেছে। ৩, ৪ নম্বর বিশাল ফ্লোর ভেঙে সেখানে বড় মার্কেট তৈরি করবে বলছে। এই মার্কেটে কে আসবে মার্কেট করতে?
“এফডিসির গেইটের সামনে এলিফেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভার নিয়ে গেছে। গেইটটা পর্যন্ত দেখা যায় না। মার্কেট হলে ১০ টাকারও কোনো ভেল্যু নাই। চলচ্চিত্রের কোনো লাভ হবে না। মার্কেটের ভাড়ার টাকাও আসবে না। এসব প্রজেক্ট লুটপাটের একটা ক্ষেত্র। বিভিন্ন প্রজেক্ট নেওয়া লুটপাটের একটা প্রক্রিয়া।”