আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ৪ শতাংশ সুদে একরপ্রতি বিদ্যমান ঋণ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন কৃষকরা। একইসঙ্গে ঋণের অংক বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ কৃষক। সার্বিক বিবেচনায় ঋণের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ এবং বিদ্যমান সুদহার কমিয়ে ২ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবেই কাক্সিক্ষত ঋণ এবং পণ্যের উৎপাদন বাড়বে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এতে বলা হয়েছে, আমদানি বিকল্প ফসল চাষে তুলনামূলক বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে এমন ২৩টি জেলা নির্বাচন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এসব জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের ৫৬টি শাখার মোট ৫৩৫ জন ঋণগ্রহীতা কৃষকের ওপর জরিপ পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ড. হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ে তিনটি টিমে নয়জন কর্মকর্তা জরিপ পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রোকেয়া খাতুনের নেতৃত্বে একটি টিমে ছিলেন ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) রেজওয়ানুল হক ও আসমা আক্তার। দ্বিতীয় টিমে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ছিলেন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) রুবেল ইসলাম ও আতাউর রহমান। তৃতীয় টিমে যুগ্ম পরিচালক (জেডি) সামির আশরাফের নেতৃত্বে ছিলেন উপপরিচালক (ডিডি) হাসান চিশতী ও নাজমুল হুদা।
ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে সরকারের সুদ ভর্তুকির আওতায় ঋণ দিয়ে আসছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। শুরুর দিকে কয়েক বছর এ ঋণের সুদহার ছিল ২ শতাংশ। পরে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়। এতদিন অন্য কৃষি ঋণের সুদহার গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে আগামী জুন পর্যন্ত সব ধরনের শস্য ও ফসল চাষে ঋণের সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানি বিকল্প ফসল অর্থাৎ বিশেষ কৃষিঋণে সুদহার কমিয়ে ২ বা ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ নীতিমালায় একরপ্রতি ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত নীতিমালার আলোকে মসলা জাতীয় ফসল ভেদে একরপ্রতি ২৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। মসলা জাতীয় ফসল হল- আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও জিরা। ডাল জাতীয় ফসলে একরপ্রতি ১৭ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা ঋণ দেয়া যায়। এর আওতায় রয়েছে- মুগ, মসুর, খেসারি, ছোলা, মটর, মাষকলাই ও অড়হর। তৈলবীজ তথা- সরিষা, তিল, তিসি, চীনাবাদাম, সূর্যমুখী ও সয়াবিন চাষে ২৩ হাজার থেকে সাড়ে ২৬ হাজার টাকা ঋণ দেয়া যায়। এছাড়া ভুট্টা চাষে একরপ্রতি ৩৫ হাজার ২৫০ টাকা ঋণ দিতে পারে ব্যাংক। তবে বর্তমানে মজুরি, সেচ, সার, ঘরে তোলাসহ অন্যান্য খরচ বিবেচনায় এ খরচ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বেশিরভাগ কৃষক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তন করে একরপ্রতি ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ভর্তুকি সুদে বিতরণ করা এই কৃষিঋণ অন্য খাতে ব্যবহার করেছেন মাত্র ৯ শতাংশ গ্রাহক। আর খেলাপি হচ্ছে খুব সামান্য ঋণ। এ ধরনের ফসলে বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৭ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে মোট ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে সব ব্যাংক। দুই হাজার ৮০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে সরকারি ব্যাংক। বাকি তিন হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে বিদেশি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম চার মাসে ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকিং খাত। এই খাতে অন্যান্য ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার অনেক কম।