গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাকে আরও বহুদূর এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় বক্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আমরা আজ অনেকদূর এগিয়েছি সত্য। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্য পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবোই, ইনশাআল্লাহ।
সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ও তৃতীয় বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এবং বৈশ্বিক মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। দুই বছর পূর্বে আজকের এই দিনে তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার যে গুরুদায়িত্ব আপনারা আমার ওপর অর্পন করেছিলেন, সেটিকে পবিত্র আমানত হিসেবে গ্রহণ করে আমরা সরকার পরিচালনার তৃতীয় বছর শুরু করতে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনাদের সবার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারছি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং একইসঙ্গে খ্রিস্টীয় ২০২১-এর শুভেচ্ছা।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের গত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং উপর্যুপরি বন্যা আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কট থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হয়নি। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এখনো সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অনেক কম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের যে মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে তা যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সেদিকে আপনাদের সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উন্নয়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিছু অসাধু মানুষ নানা কৌশলে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন- ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতেও দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার। …আমরা যদি একটু কষ্ট করি, একটু বেশি পরিশ্রম করি, সবাই সৎপথে থেকে সাধ্যমতো নিজের দায়িত্ব পালন করি, সবচাইতে বড় কথা, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি- তাহলে আমি বিনা দ্বিধায় বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে।’