বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত জিঙ্কসমৃদ্ধ চিকন চালের জাত ‘ব্রি ধান ১০০’ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত লবণাক্ততাসহিষ্ণু দেশি পাটের জাত ‘বিজেআরআই দেশি পাট-১০’ অবমুক্ত করার অনুমতি দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।
মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি মো. মেসবাহুল ইসলাম তাতে সভাপতিত্ব করেন।
ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্রি উদ্ভাবিত শততম জাত ‘ব্রি ধান১০০’ অবমুক্ত করবেন তারা।
নতুন এই জাতের ধান থেকে যে চাল হবে, তার প্রতি কেজিতে জিঙ্কের পরিমাণ হবে ২৫ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম। চাল হবে আগের জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চেয়ে সরু, ভাত হবে ঝরঝরে।
দেশের ১০টি স্থানে ট্রায়াল করে গড় ফলন পাওয়া গেছে প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন।
বোরো মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদন পাওয়া এ জাতের জীবনকাল ১৪৮ দিন। অর্থাৎ, ১৪৮ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যাবে।
শাহজাহান কবীর বলেন, ‘ব্রি ধান ১০০’ মুজিব শতবর্ষে ব্রির শততম জাত হিসেবে অবমুক্ত হওয়ায় একটি বিশেষত্ব পাবে। এ জাতের ফলন ব্রি ধান-২৯ থেকে বেশি এবং জীবনকাল ব্রিধান ২৮ -এর মত, যা আমাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
“আমাদের পরিকল্পনা, অতি দ্রুত এ জাতটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অন্যদিকে পুষ্টির যোগান দেওয়া সম্ভব হবে।”
আসছে জিঙ্কসমৃদ্ধ চিকন চালের জাত ব্রি-১০০
জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, “আশা করা যায়, এটি একটি মেগা ভ্যারাইটি হবে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। ভাত তাদের কাছে সহজলভ্য।”
বিজেআরআই -দেশি পাট-১০ জাতটি স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততাসহিষ্ণু। এটি দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় বপন উপযোগী।
এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, গাছের বয়স ১০৫-১১৫ দিন হলেই কেটে সেই জমিতে রোপা আমন ধান লাগানো যায় এবং আমন কেটে রবি ফসল চাষ করা যায়।
খুলনা ও বরিশালে পাঁচটি ট্রায়ালে হেক্টর প্রতি আঁশের ফলন ২ দশমিক ৫৭ টন ও পাটকাঠির ফলন ৭ দশমিক ২১ মেট্রিক টন পাওয়া গেছে।
এদিন বীজ বোর্ডের সভায় আগামী মৌসুমের জন্য পাটবীজ আমদানির পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ উৎপাদন বর্ষে পাটবীজের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।
বীজ ডিলার নিবন্ধন ও নবায়নের কাজটিও সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এখন থেকে বীজ ডিলারদের এব বছরের পরিবর্তে একসঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হবে।
মেসবাহুল ইসলাম বলেন, “সেবা সহজীকরণের ফলে ডিলারদের প্রতিবছর নবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে না। বীজ ডিলারদের হয়রানি অনেক হ্রাস পাবে।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বিএডিসির চেয়ারম্যন মো. সায়েদুল ইসলাম, ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. আশম আনোয়ারুল হকসহ অন্যান্য সংস্থা প্রধান ও বীজ বোর্ডের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।