আন্তর্জাতিক

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরল যুক্তরাষ্ট্র

চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সাড়ে তিন মাস পর ফের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্ত হল যুক্তরাষ্ট্র।

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম দিনই এ সংক্রান্ত একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন; তার ওই পদক্ষেপের ঠিক ৩০ দিন পর শুক্রবার দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে ফেরা কার্যকর হল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার এবং আগামী তিন দশকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওয়াশিংটন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরেছে।

বিজ্ঞানী এবং বিদেশি কূটনীতিকরা যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেন প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার নিয়ে ২০১৫ সালে হওয়া প্যারিস চুক্তিতে প্রায় ২০০টি দেশ স্বাক্ষর করেছিল।

ক্ষমতায় এসে ২০১৭ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। অবশ্য তার ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত বছরের নভেম্বর থেকে।

ট্রাম্প প্যারিস চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অন্যায্য’ চুক্তি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছিলেন। তার ভাষ্য ছিল, চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাভবান হবে চীন-ভারত।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো দেশ এখন পর্যন্ত প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়নি।

চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরার দিন মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নেন; এসব অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইতালির রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকেও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এদিন কেরি বলেছেন, ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ফলে যে সময় নষ্ট হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

“পার্থক্যটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় অতিরিক্ত সময় কাজ করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করছি আমরা। আমাদের অনেক কিছু করতে হবে,” বলেছেন এ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পথ প্রস্তুতে প্রতিশ্রুতি আছে বাইডেনের।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৈশ্বিক সমঝোতার সঙ্গে এ পরিকল্পনা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও বিজ্ঞানীরা উষ্ণতা বৃদ্ধির ভয়াবহ প্রভাব রুখতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা এখনকার অর্ধেকে নিয়ে আসার ওপর জোর দিচ্ছেন।

কেরি বাইডেনের অভ্যন্তরীণ জলবায়ু উপদেষ্টা জিনা ম্যাককার্থিকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার প্রশাসনের জলবায়ু সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন; পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রসার, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে-বাইরে কিভাবে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা যায় তা সমন্বয় করছেন।

মানবাধিকার ও বাণিজ্য নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশটিকে আলোচনার টেবিলে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন কেরি।

যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্স বলেছেন, জলবায়ু এমন একটি ইস্যু যেখানে চীন সহায়ক অংশীদার হতে পারে।

“অবশ্য চীন, আর রাশিয়াও, মাঝে মাঝে এমন আচরণ করে যেন সবকিছুই প্রতিযোগিতা,” বলেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *