২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই দিয়েছে মার্কিন গোয়ান্দা সংস্থা। মার্কিন প্রেসডেন্ট জো বাইডেনে সৌদির বাদশাহ সালমানকে ফোন দেওয়ার একদিন পর শুক্রবার এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ সালমানের সংশ্লিষ্টতার দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলো মার্কিন ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামাল খাশোগিকে নিজ সাম্রাজ্যের প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখতেন যুবরাজ সালমান। এমনকি খাশোগিকে চুপ করাতে প্রয়োজন মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতেও সম্মতি ছিল তার।তবে বারবার সব অভিযোগ অস্বীকার করাছিলো সৌদি রাজ পরিবার বা যুবরাজ সালমান।
যুবরাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ও বিশ্বস্ত রেপিড ইন্টারভেনশন ফোর্সের (আরআইএফ) সাত সদস্য তার অনুমতিতেই এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে বলে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এছাড়া ২০০৭ সাল থেকে সৌদি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার ওপর যুবরাজের প্রভাবকেও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
সম্প্রতি সিএনএন জানায়, সৌদি আরবের একটি গোপন নথিতে দেখা গেছে, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে হত্যাকারী ব্যক্তিগত দুটি বিমান ব্যবহার করেছিল যা এক বছরেরও কম সময় আগে সৌদি যুবরাজ এবং কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান ঐ বিমান কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। বিমান দুইটির ব্যবহার সম্পর্কেও যুবরাজ অবগত ছিলেন।
খাশোগি হত্যার ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলে তা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক এ বিশেষ দূত মনে করেন, এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে খাশোগি হত্যার ঘটনায় কারা দায়ী তা জানা সম্ভব হবে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তিনি যুবরাজ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক ছিলেন।
‘খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ’
বুধবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইট ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে কথা বলেন ক্যালামার্ড। তিনি বলেন, আমাদের হাতে যদি আরো প্রমাণ আসে, তবে যেসব তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে তা উপেক্ষা করাটা বাকি বিশ্বের জন্য অসম্ভব হবে। জবাবদিহিতার স্বার্থে এবং আমেরিকান গণতন্ত্রের স্বার্থে অবশ্যই ডিএনআই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
এর আগে ২০১৯ সালের জুনে ক্যালামার্ডের করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, খাশোগি হত্যার ঘটনায় যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
২০১৮ সালে ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে গিয়েছিলেন জামাল খাশোগি। সেদিনই নিখোঁজ হন তিনি। সৌদি সরকার ১৭ দিন দাবি করেছিল তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। আন্তর্জাতিক চাপে একই বছরের ১৯ অক্টোবর খাশোগিকে সৌদি দূতাবাসের ভেতর হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করে সৌদি। হত্যার অভিযোগে ১১ জন সৌদি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছিল। খাশোগিকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল বলে ধারণা করে পুলিশের।