দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এবার তিনি শেয়ার করলেন তার বাবার থেকে মুক্তিযোদ্ধের গল্প শোনার কথা।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জয় লেখেন, ‘আমি বড় হয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা যখন তার গল্প করতেন, আমাদের চারপাশে ফুটে উঠত গেরিলা যুদ্ধের জীবন্ত আবহ। দিব্যি দেখতে পেতাম, পাকিস্তানি বাহিনীর বৃষ্টির মতো গোলাগুলির মধ্যেই অস্ত্র হাতে ছুটে যাচ্ছে এক কিশোর। ছোট বোনটির সঙ্গে কবে যে শেষ গল্প হয়েছিল তার। দেখতে পেতাম, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য লাইন দিয়েছে পায়ের ফাঁকে কাদা লেগে থাকা এক কৃষক। কত দিন কাঁচা ধানের মিষ্টি গন্ধ সে নেয়নি। ওর বুকে জেদ, স্বাধীন দেশের মাটিতে গিয়ে ধান ফলাবে। এ রকম অনেক মুক্তিযোদ্ধার রক্ত মিশে গেছে মাটিতে। বহু নিস্পাপ মানুষের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল নদী। মৃত্যুকে জয় করে মানুষগুলোর মাথা গিয়ে ঠেকেছিল সূর্যে।
সারা পৃথিবী থেকেও এসে হাত ধরেছিল বন্ধুরা। ভারত আশ্রয় দিয়েছিল এক কোটি শরণার্থীকে, আর তার বহু জওয়ান দিয়েছিল প্রাণ। জাতিসংঘে সমাজতন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়ন বইয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের ঝরনাধারা। আমেরিকায় সরকার ছিল বৈরি, কিন্তু তার কবি–শিল্পী–সাংবাদিকেরা কণ্ঠে তুলে নিয়েছিল আমাদের জন্য মুক্তির গান। আমাদের মুক্তির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রবিশঙ্কর, মাদার তেরেসা, জর্জ হ্যারিসন, জোন বায়েজ, গিন্সবার্গ। আরও কত শত বন্ধু।
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি আমার বাবার গল্পে; প্রাণ নিবেদন করা বহু মুক্তিযোদ্ধার কাহিনীতে; পীড়িত নারীর আর্তিতে; বিদেশী বন্ধুদের হাতের আবাহনে; আকাশে উড়ন্ত লাল-সবুজে। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি এর ৫০ বছরের সোনালি জয়ন্তীতে ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের হেঁটে যাওয়ায়। একাত্তরে প্রাণ দেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের গর্ভ থেকে বাংলাদেশের জন্ম দেখার জন্য বেঁচে থাকা সব বাঙালিকে বিনত অভিবাদন। ’