বিনোদন

মানুষির কাছে হেরে যাওয়া মেয়েটি এখন মিস ইউনিভার্স

মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৭ প্রতিযোগিতায় ভারতের মানুষি চিল্লারকে মুকুট পরতে দেখেছেন মেক্সিকান রূপবতী আন্দ্রেয়া মেজা। তবে দমে যাননি। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে খেটেছেন। চার বছর পর তিনি জিতলেন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মুকুট।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আন্দ্রেয়া মেজাকে মিস ওয়ার্ল্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন বলেছে, ‘আমরা তোমার মুকুট জয়ে গর্বিত ও আনন্দিত। তুমি সত্যিই এর যোগ্য।’

২০১৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় মানুষি চিল্লারের কাছে হেরে প্রথম রানারআপ হন আন্দ্রেয়া মেজা। এর আগে মিস মেক্সিকো ২০১৭ খেতাব পান। সেখানেই থেমে যাননি তিনি। ভেবে নেননি যা পাওয়ার পেয়ে গেছেন। তাই লক্ষ্যে অটুট ছিলেন। এছাড়া মেক্সিকানা ইউনিভার্সাল ২০২০ স্বীকৃতি জিতেছেন। আর এবার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ধরা দিলো ২৬ বছর বয়সী এই রূপসীর মাথায়।

বিশ্বসুন্দরী মানুষির সঙ্গে মিস যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে মানবকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিতে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ও আমেরিকায় ঘুরেছেন আন্দ্রেয়া মেজা। তারা দরিদ্রদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন।

মানুষির কাছে হেরে যাওয়া মেয়েটি এখন মিস ইউনিভার্সআন্দ্রেয়া মেজার সুবাদে ১০ বছর পর মিস ইউনিভার্সের মুকুট এলো মেক্সিকোতে। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোর লুপিটা জোন্স প্রথমবার নিজের দেশকে মুকুট এনে দেন। সবশেষ ২০১০ সালে হিমেনা নাভারেতে খেতাবটি পান।

ইনস্টাগ্রামে বিজয়ের মুহূর্তের একটি ভিডিও শেয়ার দিয়ে আন্দ্রেয়া মেজা লিখেছেন, ‘মেক্সিকো এটা তোমার জন্য।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সেমিনোল হার্ড রক হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনোতে রবিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় ১৭ মে) আন্দ্রেয়া মেজার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন গতবারের মিস ইউনিভার্স জোজিবিনি টুনজি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে খেতাবটি পান জনসংযোগ কর্মকর্তা পেশায় নিযুক্ত এই তরুণী।

ইনস্টাগ্রামে মুকুট পরার মুহূর্তের একটি ছবি শেয়ার করে আন্দ্রেয়া লিখেছেন, ‘কী দারুণ মুহূর্ত! এই পথচলার জন্য আমি তৈরি!’

ফ্লোরিডা থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে গিয়ে বিভিন্ন জনদরদি সংস্থার পক্ষে কাজ করবেন আন্দ্রেয়া মেজা। বিজয়ের পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘৭৩ জন অসাধারণ তরুণীর সঙ্গে নির্বাচিত হওয়ায় আমি সম্মানিত। মিস ইউনিভার্স মুকুট জয়ে স্বপ্ন সত্যি হলো আমার। আশা করি, আগামীতে সমতার জন্য অবদান রেখে বিশ্বের সেবা করতে পারবো।’

আন্দ্রেয়া মেজার চোখে সৌন্দর্যে সংজ্ঞা কী? প্রতিযোগিতা চলাকালে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এখন অনেক আধুনিক সমাজে বসবাস করি। আজকাল সৌন্দর্য শুধু সুন্দর মুখের বৃত্তে আটকে নেই, সৌন্দর্য কেবল চেতনায় নয়, আমাদের হৃদয়ে থাকে। আমরা যেভাবে ভাবি সেভাবেই তা ছড়ায়। কখনো কাউকে বলার সুযোগ দেবেন না যে, আপনি অর্থহীন।’

৬৯তম আসরের চূড়ান্ত পর্বে একজন বিচারক জানতে চেয়েছেন, দেশের প্রধান হতে পারলে কীভাবে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করবেন? আন্দ্রেয়া মেজার উত্তর, ‘আমার মনে হয়, এমন কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জুতসই কোনো পথ নেই। তাই করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে দ্রুত লকডাউন আরোপ করবো। কারণ আমরা অনেককে হারিয়েছি, এই শোক সইবার মতো নয়। মানুষের যত্ন নিতে হবে আমাদের সবাইকে।

১৯৯৪ সালের ১৩ আগস্ট মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া সিটিতে বাদামি রঙা চোখজোড়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন আলমা আন্দ্রেয়া মেজা কারমোনা। তার পূর্বপুরুষরা এশীয়। বাবা সান্তিয়াগো মেজা, মায়ের নাম আলমা কারমোনা। তিন বোনের মধ্যে আন্দ্রেয়া সবার বড়। তাদের মোট ৪০ জন কাজিন! ২০১৭ সালে অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব চিহুয়াহুয়া থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণী।

মানুষির কাছে হেরে যাওয়া মেয়েটি এখন মিস ইউনিভার্সশুধু রূপে নয়, পড়াশোনায় মেধাবী আন্দ্রেয়া মেজা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি আছে তার। সনদপ্রাপ্ত রূপসজ্জা শিল্পী তিনি। নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলা এই তরুণী বর্তমানে মিউনিসিপ্যাল ইনস্টিটিউট ফর উইমেন-এর সঙ্গে লিঙ্গ সহিংসতা রোধে কাজ করছেন। পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে ও প্রাণীদের কল্যাণে নিরামিষভোজী তিনি। চিহুয়াহুয়ার পর্যটনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আন্দ্রেয়ার গান গাইতে ভালো লাগে। তিনি মনে করেন, অনুভূতি প্রকাশে এর চেয়ে জুতসই মাধ্যম আর হয় না। শরীরচর্চায় ২৬ বছর বয়সী এই তরুণীর গুণ হলো, টানা তিন মিনিট প্ল্যাঙ্ক করতে পারেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *