ভবিষ্যতে আর কখনই বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরো পরিবর্তন। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতে পারবে না।
সোমবার সকালেঅনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সভাপতির প্রারম্ভিক সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ স্বাধীন, বাংলাদেশ স্বাধীনই থাকবে এবং আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বোয়িং বিমানে ভারতের দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে যখন তিনি ট্রাকে করে রাজধানীর বৃষ্টিস্নাত পথ ধরে যাচ্ছিলেন, তখন লাখো জনতা তাঁকে স্বাগত জানায়।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে প্রচণ্ড বৈরী পরিস্থিতিতে তার দেশে ফিরে আসার সময়কার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘সে সময় অনেক ঝড়-ঝাপটা এবং বাধা অতিক্রম করেই আমাকে দেশে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না, আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, অনেকভাবে চিঠিপত্র পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম জাতির পিতার হত্যাকারীরাই তখন ক্ষমতায়, খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় আমি চলে এসেছি। কিছুই চিন্তা করিনি। কারণ, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই স্বাধীনতাকে আমার সফল করতেই হবে—এভাবেই একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সব সময় ছিল।’
নিজের দেশে প্রত্যাবর্তনের দিনটির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহাওয়া স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসেছিলাম তো ঝড় মাথায় নিয়ে। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল, তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়।’
তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তখনকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের, যারা আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচন করেন এবং আমি যেটা জানতাম না। তারপর থেকে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন এবং এ দেশের জনগণ, যে জনগণের শক্তিটা হচ্ছে সব থেকে বড় শক্তি। কারণ, আমি যখন মা-বাবা, ভাইবোন হারিয়ে এ দেশে এসেছি, গ্রামে-গঞ্জে যেখানেই গিয়েছি, সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।’
আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, দেশে ও দেশের বাইরের অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, এটাই সব থেকে বড় কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দলে নেতা-কর্মী অনেকে আজ নেই। সে সময় যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের অনেককেই হারিয়েছি। তারপরও যারা আছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমার ফিরে আসার ব্যাপারে সব থেকে আগে স্টেটমেন্ট দেন ছাত্রলীগের তরফ থেকে ওবায়দুল কাদের। তিনি তখন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। আর যুবলীগের পক্ষ থেকে আমাদের আমির হোসেন আমু। আর পার্লামেন্টে কথাটা তুলেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও তিনি পরে অন্য দলে চলে যান। কিন্তু তিনিই প্রথম আমার ও রেহানার দেশে আসার বিষয়টা তুলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারি, আল্লাহ সব সময় সহযোগিতা করেন এবং আল্লাহ কিছু কাজ দেন মানুষকে, সে কাজটা যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ রক্ষা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এগিয়ে যাবে, সেটাই আশা করি। আর এই করোনাভাইরাসে যাদের হারিয়েছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করি।’