রাজনীতি

অস্বস্তি নিয়ে বিএনপিতে টিকে আছি: হাফিজ

জিয়াউর রহমানের অধীনে ‘জেড ফোর্স’ এর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপিতে নিজের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন।

একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্স গঠনের দিনটি স্মরণে বুধবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে নিজের হতাশার প্রকাশ ঘটান বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “জেড ফোর্সে সময়নায়কদের মধ্যে, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে চারজন বিএনপিতে ছিলেন।

“একজন কর্নেল আকবর হোসেন, তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, অন্য দুইজন কর্নেল অলি আহমদ ও মেজর শমসের মবিন চৌধুরী, তারা অন্য দলে চলে গেছেন। আমি একমাত্র কোনোক্রমে অনেক অস্বস্তি নিয়ে এখনও টিকে আছি।”

স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তিতে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা কমিটির উদ্যোগে এই আলোচনা হয়।

১৯৭১ সালের ৭ জুলাই মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক ব্রিগেড জেড ফোর্স গঠন করা হয়। এই পদাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্বে দেন এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডার জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, গঠন করেছিলেন রাজনৈতিক দল বিএনপি।

হাফিজউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবিহাফিজউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি
বীরবিক্রম হাফিজ বলেন, “জিয়াউর রহমানকে আমরা সবাই একজন মহান রাষ্ট্রপতি রূপে জানি, তিনি যে কত কৌশলী সমরনায়ক ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অঙ্গনে তিনি একজন তেজদীপ্ত কমান্ডার ছিলেন।”

জেড ফোর্স স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা দেখিয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “আত্মদানে ও শহীদের সংখ্যাও সবচাইতে বেশি এই জেড ফোর্সে।”

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সব সময় স্বাধীন রাখার কৃতিত্বও জেড ফোর্সের বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“রৌমারীতে জিয়াউর রহমানে সাথে আমি গিয়েছি, আমাদের অন্যান্য কমান্ডাররা গিয়েছে। সেখানে আমরা ডাক চালু করেছি, একটি সিভিল প্রশাসনও চালু করেছিলাম। এই রৌমারী নয়টি মাস মুক্ত রাখার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে জেড ফোর্স।”

ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে জেড ফোর্সের বিভিন্ন অভিযানের ঘটনা তুলে ধরেন হাফিজ।

তিনি বলেন, তিনটি ব্যাটালিয়ান নিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম ব্রিগেড জেড ফোর্স গঠন করার জন্য। এই তিনটি ব্যাটালিয়ানে সদ্য রিক্রুট ছাত্ররা ছিল, যাদের কোনো সামরিক ট্রেইনিং নেই। এদের ট্রেইনিং দেওয়ার জন্য আনা হলে মেঘালয়ের তুরাগ থেকে ২০ মাইল উত্তরে তেলঢালা নামক জায়গায়। এখানে জেড ফোর্সের গোড়াপত্তন হয়। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসে যোগদান জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান।

“দুঃখের বিষয় আমরা যারা বিএনপি করি, আমরা নিজেরাই জানি না। সিলেটে কোথায় যুদ্ধ হয়েছে- আমি সিলেটের নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারাও বলতে পারেনি। এই হলো বাস্তবতা।”

“যখন আমরা ক্ষমতায় থাকি, তখন আমরা জীবিত নেতাদের তোষামদে ব্যস্ত থাকি। যখন ক্ষমতায় থাকি, তখন জেড ফোর্সের নামও শোনা যায় না। এখন কিছুটা শুনতে পারছি। সেজন্য দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটিতে ধন্যবাদ জানাতে চাই,” বলেন হাফিজ।

মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান ওমর বীরউত্তমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান আলোচনায় অংশে নেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “গত ১২ বছর যারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে, ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে জনগণকে ও এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।”

একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্স গঠনের দিন স্মরণে বিএনপির ভার্চুয়াল আলোচনা।একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্স গঠনের দিন স্মরণে বিএনপির ভার্চুয়াল আলোচনা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমরা যখন প্রকৃত ইতিহাসের কথা বলি, তখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া আসে। কারণ তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়।”

তিনি জেড ফোর্সের যোদ্ধা অলি আহমদ, সাদেক হোসেন, আবদুল হালিম, হুমায়ুন হাই, মইনুল হোসেন চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন, সাফায়েত জামিল, আবু জাফর মো. আমিনুল হক, বজলুল গনি পাটোয়ারি, মাহবুবুর রহমান, হাফিজউদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, মহসিন উদ্দিন আহমেদ, আশরাফুল আলম, আনোয়ার হোসেন, আকবর হোসেন, মহসিন উদ্দিন, এসআইএম নুরুন্নবী খান, খালিকুজ্জামান চৌধুরী, মোদাচ্ছের হোসেন খান, মাহবুবুল আলম, ওয়াকার হাসানের নাম স্মরণ করেন।

খন্দকার মোশাররফ আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, “জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেছেন, যদি তাই হয় এই জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের অধীনে যারা বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছিলেন, তারাও কি পাকিস্তানের চর ছিল কি না, তা এই সরকারকে জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে।

“যারা আজকে জিয়া্উর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা মানতে রাজি নন, স্বাধীনতার ঘোষক মানতে রাজি নন, প্রথম রিভোল্টকারী হিসেবে মানতে রাজি নন, জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে মানতে রাজি নন, তারা এই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্বীকার করছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *