ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আবারও ওয়ান ইলেভেনের ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সেই চেষ্টা ‘দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হবে।
জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার হওয়ার বার্ষিকীতে শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা এখনও ষড়যন্ত্র করছে আরেকটা ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করতে, সেই দিন আর আসবে না।
“যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় যাবার ষড়যন্ত্র করছে, তাদের সে খোয়াব দেশের জনগণ কখনো সফল হতে দেবে না। যারা ওয়ান ইলেভেনের রঙিন খোয়াব দেখছেন তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।”
২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা-হানাহানির আপাত অবসান ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে।
ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সেদিন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হয় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ওই ঘটনা ‘এক-এগারো’ বা ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিতি পায়। পরের দুই বছরে বহু রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি মামলায় আদালতের মুখোমুখি করা হয়।
দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে রাজনীতিকে নতুন করে সাজানোর কথাও আলোচিত হতে থাকে, যা পরিচিতি পায় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে।
সে সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়; প্রায় ১১ মাস তাকে রাখা হয় সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে।
কারাগারে শেখ হাসিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির জোর দাবি ওঠে। চাপের মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবসটি প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কারাবন্দি দিবস, আর তার কারামুক্তি দিবস রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্রের কারামুক্তি দিবস হিসেবেই পরিচিত লাভ করেছে।
এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ওয়ান ইলেভেনকে একটি ‘দুষ্ট ক্ষত’ হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এ ক্ষত তৈরি হয়েছে বিএনপির হঠকারী এবং ক্ষমতালোভী রাজনীতির কারণে।”
তিনি বলেন, “ইয়াজউদ্দিন একদিকে রাষ্ট্রপতি অপরদিকে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে বিএনপি একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে।”
কাদেরের ভাষায়, ওই ঘটনা রাজনীতিবিদদের জন্য ‘পাঠশালাস্বরূপ’। তিনি বলেন, রাজনীতি মানে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভসানো নয়, জনগণের জন্য নির্মোহ রাজনীতি করলে জনগণই পুরস্কৃত করে।
“তার উজ্জ্বল উদাহরণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে জনগণের আকাশচুম্বী সমর্থন। যারা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল, রাষ্ট্রের সম্পদ লুন্ঠনে ব্যস্ত ছিল, জনগণ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল।”
আওয়ামী লীগের শেকড় ‘মাটির অনেক গভীরে’ মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্রই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ ও জনগণ থেকে দূরে সরাতে অতীতেও পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বক্তব্য রাখেন।