অতি সম্প্রতি ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার খবরটি গণমাধ্যমে যথাযোগ্য গুরুত্বে প্রচারিত হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশনস’ কর্তৃপক্ষ, যারা উদ্যোগটি নিয়েছিল তারা জানিয়েছে, চেয়ারটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রক্তার্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও বাংলাদেশের জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
ব্রিটিশ ভারতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। ১৯১১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ এক রাজকীয় দরবারে কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয় আরো ২০ বছর পর লর্ড আরউইনের হাতে ১৯৩১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩০-এর দশকে এসে সিদ্ধান্তটি ত্বরান্বিত হয় স্বদেশি আন্দোলনের তীব্রতায় এবং বিশেষত বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনে বাঙালি জনগোষ্ঠীর সক্ষমতায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা কলকাতা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে নানা কারণে। প্রধানতম কারণ যে বাংলার মহানগরী কলকাতা তাদের জন্য ক্রমান্বয়েই অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল। অতএব সুবিশাল ভারতকে শাসন করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা অধিকতর নিরাপদ দিল্লি থেকে। এই স্থানান্তরের পর থেকেই ব্রিটিশের নতুন রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে দিল্লি। এর আগে এই শহরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক আধিপত্যকালে এই শহরে প্রথমত ১৭৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দিল্লি কলেজ, যা জাকির হোসেন কলেজ নামে এখন পরিচিত। এরপর ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট স্টিফেন কলেজ, ১৮৯৯ সালে গড়ে ওঠে হিন্দু কলেজ এবং ১৯১৭ সালের রামজাস কলেজ। এরপর ১৯২২ সালে গড়ে ওঠে দিল্লি ইউনিভার্সিটি। সেই থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, যেখান থেকে ভারতীয় রাজনীতি, বিজ্ঞান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্ম ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতের প্রায় সব প্রান্তে বড় এবং বিশ্বখ্যাত বহু বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, কিন্তু দিল্লি ইউনিভার্সিটি আজও তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতএব এমন একটি মর্যাদাশীল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রজনকের নামে একটি চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্ব বহন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক ও স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের সামরিক ও ধর্মতান্ত্রিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গ বা সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন চার দশকেরও বেশি সময় আগে, দেশের স্বাধীনতার প্রতিপক্ষদের সম্মিলিত আগ্রাসনে। ১৯৭৫-এর সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ঘাতকরা সদ্যঃস্বাধীন বাংলাদেশের স্বাভাবিক যাত্রাপথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিল। অনেকটা সফলও হয়েছিল তারা। যে জাতীয় চেতনা ও আদর্শের ভিত্তিতে এই যুগশ্রেষ্ঠ মহানায়কের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক আধিপত্যবাদী অগণতান্ত্রিক অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি গণমানুষ একটি জাতীয় গণবিপ্লব সম্পন্ন করেছিল, সেই আদর্শকেই প্রতিপক্ষরা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে বিস্মৃতিতে হারিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই দুই যুগের অমানিশার পর নতুন ভোরের আলো দেখা দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনর্জাগরিত হয়েছে। অতএব বাংলাদেশের ইতিহাস ও তার অন্তরাত্মার সঠিক পরিচর্চা ও সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধুচর্চা একটি অতি জরুরি কাজ। এটি কোনো হুজুগে রাজনৈতিক বিষয় নয়, কোনো শ্রেণি বা পেশার সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারও নয়, এটি এমন এক অতি প্রয়োজনীয় জাতীয় দায়িত্ব, যাকে সম্পাদন করতে হবে পরিপূর্ণ আবেগ ও ইতিহাসের নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে।
বাংলাদেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে এসব কাজে ব্রতী হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণায় আছে। এই উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ার প্রতিষ্ঠা ছাড়াও পূর্ণ নতুন কোর্স ও ডিপার্টমেন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর নামে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি মনে করি এসব উদ্যোগ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
তবে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে এসব উদ্যোগের কতটা নিছক রাজনীতির হুজুগে বিবেচনায় বা কতটা সত্যিকারের বোধ থেকে উৎসারিত। দেশে সম্ভবত এখন ৩৭টি কিংবা আরো বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, আছে ৯৫টি ব্যক্তিমালিকানার বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কয়েকটি মাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য কোথাও বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’ বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করে। এরপর কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারও পরে চেয়ারটি প্রতিষ্ঠা পায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদে। খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও চেয়ারটি স্থাপন করা হয়েছে জানতে পেরেছি। এসব উদ্যোগের পেছনের মূল উদ্দেশ্য মহান এই নেতার জীবন ও কর্ম, তাঁর রাজনীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করা। তবে কতটা সফলভাবে এসব উদ্যোগ প্রয়োজনীয় গবেষণায় রত হতে পেরেছে এবং যদি না পেরে থাকে তাহলে সীমাবদ্ধতাগুলো কী, সেগুলোও মূল্যায়নের দাবি রাখে বৈকি।
জাতির পিতার নামে এমন কোনো চেয়ার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণার বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। যত দূর জানি, এসব পদে যাঁরাই নিয়োগ পাবেন তাঁদের মূল কাজ হবে গবেষণা এবং নির্মোহ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানা যোগ্য কর্মসূচি নিয়ে চেয়ারটির মর্যাদা রক্ষা করা। এসব কাজ অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে, অন্যথায় এই চেয়ার প্রতিষ্ঠা অর্থহীন হবে। বলা বাহুল্য, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন মহলে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কারণ বঙ্গবন্ধু চেয়ারের প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে মূলত কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে। সেখানে রয়েছে যেমন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক জীবন, তেমনি আছে সদ্যঃস্বাধীন দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে তাঁর অবদানের চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা। আমার বিশ্বাস, জাতীয় ইতিহাসের এসব মৌলিক দিকগুলোর ওপর বিস্তারিত ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা হওয়া উচিত। কারণ এসবের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত হবেন।
শুধু দেশের মাটিতে নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতেও বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, যা একটি আন্তর্জাতিক মর্যাদাশীল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই চেয়ারে যাঁরা বসবেন তাঁরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে উচ্চতর গবেষণায় রত হবেন, যেন তা বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ স্থাপনে ভূমিকা রাখে। যত দূর জানি, এআইটিতে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার ফেলো’ বৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে, যা গবেষণারত ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করে। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক জয়শ্রী রায় এই চেয়ারের প্রথম ব্যক্তি। আইইটির চেয়ারটির পত্তন করা হয়েছে মুখ্যত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণা এবং একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, উচ্চশিক্ষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সেই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে।
অন্যদিকে ব্রাজিলের মর্যাদাপূর্ণ ‘দি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাজিল’ তার ‘সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’ ডিপার্টমেন্টে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করেছে। দৃশ্যতই এই উদ্যোগ লাতিন আমেরিকার সমাজে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়টি একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদেরও উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রধান মিত্র দেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তঘেরা ভারত, যার সঙ্গে গণমানুষের ঐতিহাসিক মেলবন্ধন আছে। অতএব ভারতের মাটিতে কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা পায়, তখন তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে, সেটিই প্রার্থিত। স্বভাবতই আশা করতে পারি যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারটি একদিকে যেমন ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শান্তি ও সৌহার্দ স্থাপনে এর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। জেনেছি, চলতি বছরে ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে চেয়ারটি স্থাপনের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখুক, একই সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলার বিকাশ ও লেনদেনে ভূমিকা রাখুক—এই আমাদের প্রত্যাশা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পি সি যোশী বলেছেন, ভারতের মাটিতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার উপলক্ষটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক, কারণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্ত জীবনের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৃতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই চেয়ার অলংকৃত করবেন এবং এতে বাংলাদেশসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ উন্মুক্ত হবে। আমার বিশ্বাস, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পরিবর্তিত সময়ের বাস্তবতায় দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, যদি উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনায় অগ্রসর হওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, এই চেয়ারের আওতায় নৃতত্ত্ব, ভূগোল, ইতিহাস, বাংলাসহ আধুনিক ভাষাগুলো, সংগীত, শিল্পকলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সমাজবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হবে। আশা রাখি ভারতের মাটিতে এই বঙ্গবন্ধু চেয়ার এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে সফল হবে। কারণ বাংলাদেশের হলেও বঙ্গবন্ধু এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন-সংগ্রাম ও আদর্শ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়নে তাৎপর্যবহ।
শুধু ভাষা ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম একই সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্যও বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি শুধু ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেননি, একই সঙ্গে বিভাগপূর্ব কালের জনজীবনের দ্বন্দ্ব, তিক্ততা ও নানা অভিজ্ঞতা তাঁকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করেছিল যে তিনি তাঁর সময়ে মানুষে মানুষে সৌহার্দ ও শান্তি স্থাপনের অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সে কারণে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হলে তা দুই দেশের গণমানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু শুধু সফল প্রবাদতুল্য রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন একই সঙ্গে প্রবল অসাম্প্রদায়িক ও সাহসী সমাজসংস্কারকও, যিনি সব কূপমণ্ডূকতার বাইরে দাঁড়িয়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সত্যের পথে সাহসী করে তুলেছিলেন। কাজেই তাঁর মানবতাবাদী নীতি ও আদর্শ শুধু আজকের জন্য নয়, অনাগত দিনের সমাজ নির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।