জাতীয়

প্রথম দিনেই জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট

আর মাত্র দুই দিন পর ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার প্রথম দিনেই জমে উঠেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বসিলা কোরবানির পশুর হাট। গতকাল পর্যন্ত এই হাটে কোরবানির পশু এসেছে সাত হাজারের বেশি। এর মধ্যে গরু প্রায় ছয় হাজার আর ছাগল এক হাজার। এর বাইরে ওই হাটে উট, মহিষ ও ভেড়াও দেখা গেছে। প্রথম দিনে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাসমাগম ছিল দেখার মতো। তবে গতকাল কোথাও জাল নোট, ছিনতাই কিংবা চুরির মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হাটে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

গতকাল ছিল কোরবানির পশুর হাটের প্রথম দিন। শুরুর দিনেই বিপুল ক্রেতাসমাগমে জমে উঠেছে মোহাম্মদপুর-বসিলা পশুর হাট। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেলা যত গড়াচ্ছিল, তাল মিলিয়ে হাটে বাড়তে থাকে ক্রেতার ভিড়। শিশু ও বয়স্কদের হাটে নিয়ে আসা নিষেধ থাকলেও বেশির ভাগ ক্রেতা এসেছে সপরিবারে। আর কিছুক্ষণ পরপরই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা গরু ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছিল। গরু ব্যবসায়ীদের হাটে প্রবেশ করার কথা জীবাণুনাশক টানেল দিয়ে। অথচ হাটের প্রবেশপথে দেখা যায়নি টানেল। তবে মাইকে বিরতিহীন ঘোষণা করা হচ্ছিল স্বাস্থ্য সচেতনতার বিভিন্ন দিক। এসবে কাউকে কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি।

মোহাম্মদপুর-বসিলা পশুর হাটের ইজারাদার আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দুটি জীবাণুনাশক টানেল এনে রেখেছি। এখন তো সবাই হাটে গরু নিয়ে ঢুকতেছে, তাই সেগুলো বসাইনি। একটু পরেই প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হবে।’

গতকাল এই হাটে দেশি জাতের ছোট আকারের গরু বিক্রি হতে দেখা গেছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে বিদেশি জাতের এবং দেশি-বিদেশি সংকর জাতের গরুর দাম আকারভেদে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাইতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে দেশি ছোট আকারের গরুর চাহিদা বেশি। আর গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দামও বেশি।

এ বছর হাটে ছাগলের চাহিদাও তুলনামূলকভাবে বেশি। গতকাল প্রতিটি ছাগল বিক্রি হতে দেখা গেছে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাবনা থেকে ৫০০ ছাগল নিয়ে বসিলা হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী মনির। এরই মধ্যে তাঁর ১০০ ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তিনটি বুথ রয়েছে এই হাটে। বিচ্ছিন্নভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতেও দেখা গেছে। তবে হাটে গতকাল কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন র‌্যাব ২-এর কর্মকর্তা তপন চন্দ্র রায়।

উত্তরা-১৭ নম্বর সেক্টরে কোরবানির পশুর হাট : হাটে কোরবানির পর্যাপ্ত পশু থাকলেও প্রথম দিনে তেমন জমেনি উত্তরা-১৭ নম্বর সেক্টরের পশুর হাট। প্রথম দিনে উল্লেখযোগ্য বিক্রিও হয়নি বলে জানান বিক্রেতারা। ক্রেতাও ছিল কম। গতকাল এই হাটে যেসব কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ ছিল আকারে ছোট ও মাঝারি। দিনভর ওই হাট ঘুরে অন্তত ২৫টি গরু বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। দু-একটি বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকার বেশি দামে।

কোরবানির পশু বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যাশিত বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে তার বেশির ভাগই ছোট আকারের। ব্যবসায়ীরা এবার পশুর দাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় থাকলেও আশা করছেন আজ রবিবার থেকে সব ধরনের গরু বিক্রি বেড়ে যাবে।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই। হাট কর্তৃপক্ষের ভলান্টিয়ার মাস্ক দিলেও প্রায় সবাই মুখে না লাগিয়ে থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছে।

জানতে চাইলে আজমল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কত আর মাস্ক পরন যায়! এই গরম এই বৃষ্টি! মাস্ক ময়লা হইয়া গেছে, তাই ফালাই দিছি। ভলান্টিয়ার আইলে দিবো, তখন আবার পরুম।’

জামালপুরের মেলান্দহ থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী হযরত আলী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দুই দিন হলো হাটে এসেছি। এই সময়ে তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এগুলো মাঝারি সাইজের। আশা করছি, বড়গুলা রবিবার বা সোমবার থেকে বিক্রি করতে পারব। এখন যাঁরা আসছেন তাঁদের বেশির ভাগ দরদাম দেখতে আসছেন।’ কোরবানির পশু কিনতে হাটে এসেছেন খিলক্ষেতের জুবায়ের আলী। কী ধরনের গরু কিনবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক লাখ টাকার কাছাকাছি দামে একটা গরু কিনব। ঠিকঠাকমতো পেলে আজই (গতকাল) কিনব, না হলে পরে আবার আসতে হবে।’

তুরাগ এলাকা থেকে আসা ক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, ‘৬৫ হাজার টাকা দিয়া একটা ছোট ষাঁড় কিনছি। প্রথম দিনেই কিনলাম। পরে ভিড় বাড়বে। ঝামেলা কমাতে আগেভাগেই কিনে রাখলাম।’ হাটের ইজারাদার নূর হোসেন বলেন, প্রথম দিন ক্রেতারা তেমন আসেনি। ফলে বিক্রি কম। তবে কাল থেকে হাট জমে যাবে।

এ বছর ঢাকার দুই সিটিতে মোট ২০টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *