বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিক, সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ফোনে গোপনে নজরদারি করতে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ সরকারগুলোর কাছে একটি ফোন স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে ভারতে প্রায় ৩০০ জনের ফোনে আড়িপাতার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। আড়িপাতা থেকে রক্ষা পাননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। খবর বিবিসি ও ডয়চেভেলের
ইসরাইলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের এই স্পাইওয়্যার কিনেছে যেসব ক্রেতা তারা ৫০ হাজার ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি চালিয়েছে। এই তালিকা এবং এর ওপর তদন্ত প্রতিবেদনটি বিশ্বের কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পেগাসাস নামে এই স্পাইওয়্যারটি সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিডান, ল্য মোঁদ এবং আরো ১৪টি সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। তবে মোট কয়টি দেশে কতগুলো ফোন হ্যাক করা হয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ম্যালওয়্যারটি বিক্রি করেছে যে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান সেটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, মানবাধিকার রেকর্ড ভালো এমন দেশের সামরিক বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা বিভাগের কাছে তারা এই সফটওয়্যার বিক্রি করেছে।
ভারতে তোলপাড়
ভারতের নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার এই হ্যাকিংয়ের তালিকায় সে দেশের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী, বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে। তালিকায় এই পোর্টালের দুজন প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিকের নামও রয়েছে। কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী, রাহুল গান্ধীসহ তিন জন প্রধান বিরোধী নেতা-নেত্রী, একজন সাংবাধানিক পদাধিকারী, ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, বহু ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক প্রধান, সমাজকর্মী, আমলা, আইনজীবীর ফোন পেগাসাস দিয়ে আড়িপাতা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ১৭টি দেশের সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামে একটি তদন্ত করছিল। এই রিপোর্টের কথা সামনে আসার পরই হইচই শুরু হয়েছে। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। কারণ, ইসরাইলি সংস্থা জানিয়েছে, তারা পেগাসাস সফটওয়ার কেবলমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছেই বিক্রি করেছে। কিন্তু মোদি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ফোনে আড়িপাতা নিয়ে দেশে আইন আছে, নিয়ম আছে। সেই নিয়ম মেনে জাতীয় স্বার্থে কিছু ফোনে আড়িপাতা হয়। তবে তার জন্য আগে থেকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়। সরকার দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ বলেও জানানো হয়েছে।
কাদের লক্ষ্য করে এই হ্যাকিং
পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্বের ৫০টি দেশে অন্তত ১ হাজার জনের নাম তারা জানতে পেরেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরব দেশের বেশ রাজপরিবারের কয়েক জন সদস্য। সিএনএন, আলজাজিরা এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ ১৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের নাম এই তালিকায় রয়েছে। এই অবৈধ নজরদারির ঘটনা বেশির ভাগ ঘটেছে মূলত ১০টি দেশে : ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে তালিকায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আছেন।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী
ইসরাইলের সংস্থা এনএসও এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা দিয়ে মোবাইলে আড়িপাতা যায়। ফোনের কথাবার্তা, হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট, ছবি, কী তথ্য আছে সবই জানা যায়। মোবাইল যিনি ব্যবহার করছেন তিনি কিছুই জানতে পারেন না। সাধারণত ফোনে একটি ওয়েবসাইটের লিংক পাঠানো হয়। সেই লিংকে ক্লিক করলেই পেগাসাস ডাউনলোড হয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস বা ভিডিও কল করেও পেগাসাস যে কোনো ফোনে ইনস্টল করা যায়। এই স্পাইওয়্যারটি আপনার অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। আপনি কোথায় আছেন, কোথায় গিয়েছিলেন, অথবা কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন, পেগাসাস সে সম্পর্কেও জানতে পারে বলে মনে করা হয়।