স্বাধীনতার তিন বছর পার না হতেই জাতির পিতার বড় ছেলে ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২১’প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়ে’এ কথা বলেন সরকার প্রধান।
১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায় তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। অথচ রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, জাতির পিতার ছেলে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করত। কখনো বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি, সেজন্য অর্থ সম্পদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। আর ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না।
শেখ কামাল অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করত জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে গড়ে তোলা ও দেশের মানুষের পাশে থাকা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গন, এসব কিছুর উন্নতি করা, এটাই ছিল তার সব থেকে বড় কথা। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করত।
‘আবুল ফজল সাহেব একটা লেখা লিখেছিলেন, সেটা যদি কেউ পড়েন তাহলে দেখবেন যে কীভাবে কামালকে তিনি, তার যে অমায়িকতা, সাদাসিধে জীবনযাত্রা, চলাফেরা সেটাই তিনি তুলে ধরেছেন।’
বিলাস ও ব্যাসনে শেখ কামালের কখনো মন ছিল না জানিয়ে তার বোন শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার শিক্ষা ছিল ও মায়ের শিক্ষা ছিল। তাছাড়া একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সেখানে তো বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। আর ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থ সম্পদ, এ সব দিকে তার কোনো নজরই ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা জানান, পাকিস্তান আমলে শোষিত বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। সে কারণে তার সন্তানরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও সেই কষ্টকে কখনো কষ্ট মনে করেননি।
‘আমার মা সেটা করতে দেননি বা কোনো হা-হুতাশ বা কোনো চাওয়া বা অতিরিক্ত কিছু চাওয়া সেটা ছিল না। সাধারণভাবে জীবন যাপন করা, একটা আদর্শ নিয়ে চলা এবং দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা- এটাই আমাদের শিক্ষা। সেই শিক্ষাই কামাল সব সময় অনুসরণ করেছে।’
স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে শেখ কামালের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যে আধুনিক ফুটবল খেলা বা ক্রিকেট খেলা বা এই যে খেলাধুলা, সেটাকে একটা আধুনিকতার ছোঁয়া এবং সংগীত জগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে, সেখানেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সে অনেক অবদান রেখে গেছে আমাদের সমাজের জন্য।
দেশেরই কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আজীবন শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অথচ এদেশেরই কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সব থেকে ট্র্যাজেডি কামালের জন্য, যে নূর (বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী) আর কামাল একসাথে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেছে, যখন বাসা আক্রমণ করে কামাল নিচের বারান্দায় চলে যায়, ও যখন দেখে নূর, হুদা- এরা এক সাথে ঢুকছে, তখন তাদেরকে বলেছিল, আপনারা এসে গেছেন খুব ভালো হয়েছে। দ্যাখেন বাসা কারা আক্রমণ করেছে। এই কথা শেষ করতে পারেনি, ওই নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে ওঠে। ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে না ঘটলে বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে ঘটে গেছে। ১৫ আগস্ট যদি আজকে বাঙালির জীবনে না ঘটত। তবে এই বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলত। এই হত্যার পর বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশে ঘোষণা দিয়েছিল,।যদিও সেটা টেকে নাই। কাজেই চক্রান্তটা কোথায়, কীভাবে ছিল সেটা নিশ্চয় দেশের মানুষ এখন এতদিনে উপলব্ধি করতে পারে। আর কতবড় বিশ্বাসঘাতকতা সেটাও নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারেন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২১ বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদও উপস্থিত ছিলেন।