লকডাউনের মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখায় করোনাভাইরাস মহামারী প্রতিরোধের চেষ্টা ‘ব্যহত’ হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পালনে ‘বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি’ হচ্ছে বলে মনে করছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তার দলের এ মতামত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন দিয়ে আবার রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকদের চাপে কারখানা চালুর ঘোষণা করোনা অতিমারী রোধ ব্যহত ও ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
“এতে প্রতীয়মান হয়, সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বা করোনা মহামারী রুখতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কোনো সমন্বয় নেই।”
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিলকে ‘আরো প্রলম্বিত করবে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফজলে হোসেন বাদশা।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকাই যে এখন প্রধান অস্ত্র, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এজন্য সরকারের কাছে ভ্যাকসিন কর্মসূচির একটি রোডম্যাপ দাবি করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ প্রথমেই ভ্যাকসিন এনে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারলেও দীর্ঘ সময়ে তা অনিশ্চয়তায় পড়েছিল।
“সে সময়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহে একটি উৎসে নির্ভরতা, একক ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনার বাধা প্রদান এবং ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি ও কূটনীতি সরকারের প্রাথমিক সাফল্যই কেবল ম্লান করে দেয়নি, জনগণের জীবন ও জীবিকাকেও ঝুঁকিতে ফেলেছিল।”
জুন মাসে সীমান্তের জেলাগুলোতে যখন সংক্রমণ বাড়ছিল, তখন দ্রুত লকডাউন জারি না করায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে বলেও মনে করেন রাজশাহীর এমপি বাদশা।
তিনি বলেন, লকডাউন সফল করতে হলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক শক্তি, সামাজিক শক্তিসহ সমাজের অন্যান্য অংশকে যুক্ত করা প্রয়োজন।
“আমরা লক্ষ্য করেছি, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার শুরু থেকেই রাজনৈতিক সামাজিক ও জনপ্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভর করে প্রশাসনিক হুকুমদারিতে করোনার থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়হীনতা ও সর্বোপরি অব্যবস্থাপনা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে “
এক প্রশ্নের জবাবে বাদশা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের যে জোট রয়েছে, সে জোটের একটি অংশ ওয়ার্কার্স পার্টি। অথচ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তাদের পার্টিকেও যুক্ত করা হয়নি।
তবে মহামারী প্রতিরোধে ওয়ার্কার্স পার্টি ‘বসে নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা এ বিষয়ে ১৮ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন নামে ‘স্বেচ্ছাসেবক ব্রিগেড’ গঠন করে পার্টি স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মীরা সচেতনতামূলক প্রচার ও মাস্ক বিতরণ করছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অভিঘাত আগামী দিনগুলোতেও থাকবে। তাই জীবনকে রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে সেভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
“রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সংশ্লিষ্টতা ও অংশগ্রহণে করোনাভাইরাসের মহামারী ও সকল জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যক্রমে এবার তার প্রচণ্ড অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।”
রাজনৈতিক দল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লে দেশের গণতন্ত্রও ‘অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে’ বলে হুঁশিয়ার করেন ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা।