বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের মেয়রের সঙ্গে প্রশাসনের বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তার মতে, এটা অচিরেই মিটে যাবে।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বরিশালের আলোচিত ঘটনাটি নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
ওই ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ এনে মেয়রের বিরুদ্ধে যেমন মামলা হয়েছে। তেমনি পাল্টা মামলার আবেদন হয়েছে ইউএনও ও পুলিশের বিরুদ্ধেও।
এই ঘটনার পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইউএনওর অপসারণ চেয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এর ঘটনায় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না- প্রশ্নে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “না, আমি একেবারেই মনে করি না।
“মত পার্থক্য থাকতে পারে, এটা থাকবেই। পরিবারের ভেতরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেমনি মত পার্থক্য থাকে, বাবা-সন্তানের মধ্যেও মত পার্থক্য থাকে। আমরা যারা কাজ করি, আমার অধীনস্থদের সাথে আমার যেভাবে কথায় মত পার্থক্য থাকে, আবার আমরা একসঙ্গে কাজও করি।”
“কোনো ভুল বোঝাবুঝির কারণে যদি ঘটনাটা অতিরঞ্জিত হয়ে হয়ে থাকে, ভুল বোঝাবুঝির যদি নিরসন হয়, তাহলে একটি গণ্ডির ভিতরে চলে যাবে,” বলেন তিনি।
তাহলে কি ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ছিল- প্রশ্নে তাজুল বলেন, “স্বাভাবিকভাবে ভুল বোঝাবুঝিই হয়েছে। আপনারা কি অন্য কিছু মনে করেন নাকি? সব ঘটনাই ভুল বোঝাবুঝি থেকেই হয়।”
‘ভুল বোঝাবুঝি’ নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আছেন, স্থানীয় প্রশাসন আছেন, তারা নিজেরাও স্ব স্ব দায়িত্ব মর্যাদাপূর্ণভাবে পালন করতে চান। তাদের নিজেদের মধ্যে উদ্যোগ থাকতে পারে, তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে। আমাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা করব।”
এই প্রসঙ্গে তিনি মন্ত্রী বলেন, “বরিশালের বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে অভিযোগের পরও তারা কিন্তু কাজ করেছে। তারা এখন সেখানে ক্লিন করেছে। সেখানে প্রতিবাদ মিটিং-মিছিল ছিল, সেটা তো বন্ধ হয়েছে।
“তারা হয়ত একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে এসেছে। তারা বুঝেছে, এটা নিজেদের মধ্যে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এটা কারও জন্যই শুভকর না।”
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে কোনো তদন্ত করা হবে কি না- প্রশ্নে তাজুল বলেন, “প্রয়োজনের সাপেক্ষে তদন্ত অবশ্যই করা হবে। সবকিছুই তদন্ত করা হবে। সিটি কর্পোরেশন যেমনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও দেশের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রত্যেককেই দায়িত্ব পালন করার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে, স্ব-স্ব মর্যাদার প্রতি সম্মান করে।”
সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কর্তা যেমন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, তেমনি উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণও এই মন্ত্রণালয়ের উপর। তবে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন, পুলিশের নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের হাতে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিকভাবে যেহেতু মামলা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করবে। আমাদের পক্ষ থেকে যদি তদন্ত করার দরকার, সেটা আমরা তো বিভিন্নভাবেই করি।
“এটা সাংবাদিকদের তো বলারই দরকার নেই। আমার মনে হয়, আপনারা নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, আমরা আমাদের কাজ কী করি, পুঙ্খানুপুঙ্খ আপনাদেরকে বলে ফেলি। কাজটি একটি ফলাফল আকারে আসলে তখন হয়ত আপনারা জানবেন।”