উৎসবমুখর পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন পালিত হয়েছে।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া কেক কাটা, আনন্দ র্যালি, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সংগঠন। এছাড়া এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি আয়োজন করে।
রক্তস্নাত বাংলায় স্বজন হারানোর শোক বুকে চেপে আন্দোলন-সংগ্রামে গণতন্ত্রের পথযাত্রায় শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতা। তার নেতৃত্বেই সব সূচকেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। তিনি রাজনীতির পথচলায় নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিবের প্রথম সন্তান তিনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করায় বর্তমানে দেশে বাইরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরআগে ২০২০ সালে করোনার কারণে ভার্চুয়ালী জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করলে তিনি দেশে জন্মদিন পালন করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী থাকালীন বিগত সময়গুলোতে দেশের বাইরে জন্মদিন পালন করতে হয় তাকে।
৭৫ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭৫ পাউন্ডের কেক কাটা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা এবং বঙ্গবন্ধুসহ ৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়।
এছাড়াও গোপালগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে র্যালি, কেক কাটা, আলোচনা সভা, দোয়া-মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত হয়। এরআগে শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ কৃষকলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক বিল্পব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয়ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আজকের অবস্থায় উঠে এসেছেন। তিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব নেতার কাতারে পৌঁছেছেন। শেখ হাসিনা আজ একটি ব্র্যান্ডের নাম। শেখ হাসিনা নিজেই একটি ইতিহাস। ইতিহাসের প্রয়োজনে শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে উঠে এসেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব নেতার কাতারে পৌঁছেছেন। তাই তো শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব বিশ্বে প্রশংসিত।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সাথে সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার (মেরুল বাড্ডা), প্রথম প্রহরে খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, সকালে তেজগাঁও জকমালা রানীর গির্জা এবং বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন,অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য, শতায়ু কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপদ সংকুল পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ নব্য পাকিস্তান হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। বাঙালি জাতিকে নতুন ধারায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আয়োজন করে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কাশেম হুমায়ুন, এনামুল হক চৌধুরী, মনজুরুল আহসান বুলবুল, সুভাষ চন্দ্র বাদল, মুন্নী সাহা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। তিনি শততম জন্মদিনেও এ পৃথিবীতে থাকবেন, সেই কামনা করছি।
বুড়িগঙ্গায় নৌকাবাইচ
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বুড়িগঙ্গায় এক বিশেষ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। নৌকাবাইচ শেষে সুধি সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল নৌকা বাইচ উদ্বোধন এবং পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
যুবলীগের আলোচনা সভা ও ‘আশ্রয় কর্মসূচি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে যুবলীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ‘আশ্রয় কর্মসূচি’ উদ্বোধন করা হয়। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি। এছাড়া অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি নির্মলেন্দু গুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ মিছিল করে ছাত্রলীগ। সংসদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয় আনন্দ মিছিল। ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এরআগে প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতশবাজী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করে ছাত্রলীগ।
গণটিকা কার্যক্রম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন সকাল ৯টায় গণটিকার আওতায় ৭৫ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দুপুর আড়াইটা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এই কর্মসূচির পাশাপাশি নিয়মিত ৫ লাখ টিকাও প্রদান হয়।