স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে।
মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল।
বাংলাদেশের পাশাপাশি লাও ও নেপালও উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই তিন দেশ উত্তরণের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় পাবে। অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে।
সাধারণত প্রস্তুতির জন্য তিন বছর সময় দেওয়া হলেও মহামারীর অভিঘাতে অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলে উঠতে এই বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়।
সেই শর্ত পূরণ হওয়ায় চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায় বাংলাদেশ।
তখনই সিডিপি বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এখন সেই প্রস্তাব গৃহীত হল।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ঋণে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল, প্রস্তুতিমূলক সময়েও তা অব্যাহত থাকবে।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে।
সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।
উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার।
মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট ২০২০ সালে ছিল ৭৫.৩।
অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২।
সাধারণ পরিষদে তিন দেশের উত্তরণের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতম সময়েও সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার ফলে আজ রূপকল্প-২০২১ পূর্ণতা পেল।”
এলডিসি থেকে উত্তরণ পাওয়া এবং উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রণোদনা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তা কাঠামো নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন রাবাব ফাতিমা।
উত্তরণ চ্যালেঞ্জের প্রতিটি দিক, বিশেষ করে উত্তরণ পরবর্তী আন্তর্জাতিক সহায়তা, বাধাহীন উত্তরণ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়নের মত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরিরও আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।
১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। এর আগে বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।