মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে সাদা ও বাদামি রঙের ডোরাকাটা কয়েদির পোশাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন।
‘গণ অসন্তোষে উসকানি’ এবং ‘কোভিডবিধি ভাঙার’ অভিযোগে রুদ্ধদ্বার বিচারে এ মাসেই সু চি কে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল জান্তা সরকার।
পরে সেই সাজা কমিয়ে দুই বছর করা হয় এবং সঙ্গে এও জানানো হয়েছিল, বর্তমানে অজ্ঞাত যে স্থানে সু চিকে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানেই তিনি সাজা খাটবেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হবে না।
কিন্তু শুক্রবার সু চিকে প্রথমবারের মতো তার চিরাচরিত পোশাক নয়, বরং মিয়ানমারের কয়েদির পোশাক- সাদা ব্লাউজ আর বাদামি লুঙ্গি- পরে আদালতে হাজির হতে দেখা গেছে।
সু চি সাধারনত মার্জিত ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন এবং কখনও কখনও চুলে ফুল গুঁজে রাখেন।
কিন্তু এদিন তাকে কয়েদির পোশাকের ওপর ঠাণ্ডার কারণে একটি ওভারকোট পরতে দেখা গেছে। যদিও তার হাতে কোনও হাতকড়া লাগানো ছিল না। তবে সু চি সাধারনত কানে যে দুল এবং ঘড়ি পরেন তাও তাকে পরতে দেখা যায়নি।
বিষয়টি মিয়ানমারে বিচারাধীন নেত্রী সু চি এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জান্তা সরকারের আচরণে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তনের ইঙ্গিত কি-না তা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে না।
সু চির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে বিক্ষোভ-আন্দোলনে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কারের পথ রুদ্ধ হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সেদিনই সু চি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সু চিকে তখন থেকেই বন্দি করে রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে আসছে। গত ৬ ডিসেম্বরে সু চির জেলের রায় হওয়ার পর এর সমালোচনা করেন মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনারের আঞ্চলিক উপ পরিচালক মিং উ হাহ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিরোধীদের নির্মূল করে মিয়ানমারের কণ্ঠরোধ করার জন্য সামরিক বাহিনী কী করতে পারে, ভুয়া অভিযোগে সু চিকে এরকম শাস্তি দেওয়া হল তার সর্বশেষ নমুনা।”
মিয়ানমারের রাজধানী নিপিধোর সাবেক মেয়র মায়ো অং এরও বিচার চলছে। তাকেও শুক্রবার কয়েদির পোশাকে আদালতে হাজির হতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালত সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা। কয়েদির পোশাক কারা কর্তৃপক্ষ দিয়েছে বলে জানান তিনি।