নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় বাধা থাকলেও বিভিন্ন কৌশলে মাঠে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। বিশেষ করে নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীই বসে নেই।
উঠান বৈঠক, ঘরোয়া বৈঠক কিংবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে সরাসরি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, মিছিল করছেন; আবার কেউ কেউ শহরময় মাইকিং করেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো পোস্টার ব্যানার সরিয়ে নেওয়া তো দূরের কথা নতুন করে পোস্টারে পোস্টারে ভরে ফেলছেন পুরো এলাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসের কোনো নজরদারি নেই বলে প্রার্থীদের অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করছেন।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের নাসিক নির্বাচনে মোট ২৫৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে থেকে ২১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৮, নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৬ জন ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
এদিকে শুক্রবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ সময় তৈমুর আলম খন্দকারকে পেয়ে মুসল্লিরা ছাড়াও ওই সব এলাকার শত শত মানুষ ছুটে আসেন তাকে এক নজর দেখেতে।
জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে অ্যাডভোকেট তৈমুর জুমার নামাজ আদায় করেন নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের আমলাপাড়া বড় মসজিদে। নামাজ শেষে তিনি সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর আসরের নামাজ আদায় করেন নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের তল্লা বড় মসজিদে এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করেন ১৮নং ওয়ার্ডের নোল্লাপাড়া বড় মসজিদে।
এ সময় তৈমুর আলম গণমাধ্যমের কাছে বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে স্মরণকালের বিশাল বিজয় র্যা লি হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেই র্যা লিতে যাইনি। অথচ ওই দিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকার পক্ষে করা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, শহরে মিছিল করেছেন।
তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) নৌকার প্রার্থী বন্দরের কদমরসুল দরগায় গিয়েছেন এবং সেখানে শত শত লোক নিয়ে মিছিল করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্বাচন কমিশন দ্বিমুখী আচরণ শুরু করে দিয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের উচিত এই দ্বিমুখী আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমি আগেও বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় এ নির্বাচনটি যদি কারচুপিহীন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তবে তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইস্যুটিকেও মসৃণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জবাসী তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে কারণ সাধারণ মানুষ তাদের মতপ্রকাশে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
অপরদিকে শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার কদমরসূল দরগাহ জিয়ারতে যান আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। যাবার সময় এবং জিয়ারত শেষে ফেরার পথে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। অনেকে আগে থেকেই সেখানে ফুল নিয়ে আইভীর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। তারা ফুল ছিটিয়ে আইভীকে বরণ করে নেন।
তবে এ মিছিল ও প্রচারণা নিয়ে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমের কাছে কোনো কথা বলেননি আইভী। যদিও সেখানে উপস্থিত আইভীর নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, আইভী কাউকে জানিয়ে আসেননি এবং তিনি মিছিল করতে বলেননি। উপস্থিত নেতাকর্মীরা হয়তো নৌকার পক্ষে নিজে থেকেই স্লোগান দিয়েছেন। তবে সিনিয়র নেতারা স্লোগান দিতে বারবার নিষেধ করলেও নেতাকর্মীরা তা শোনেননি।
জানা গেছে, নাসিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির ৫ ধারায় অনুযায়ী কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবে না।
সেখানে এই বিধির ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু বলেন, ডা. আইভী এ অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন মানুষ। তিনি কোনো এলাকায় গেলে এমনিতেই শত শত মানুষ তার পেছনে হাঁটতে থাকেন। সাধারণ মানুষকে তো আর আটকে রাখা যায় না।
অপরদিকে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর গত ২ দিনের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মতিয়ুর রহমান জানান, আইন সবার জন্য সমান। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা আমার জানা নেই, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
উল্লেখ্য, এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করেছেন নগরীর বিভিন্ন সড়কে। এ ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি নির্বাচন কমিশন।