‘এক পায়ে যুদ্ধ জয় করা’ তামান্না নূরার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য শনিবার রাতে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তামান্নার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে যান।
সেখানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান নেতৃবৃন্দ। এ সময় তামান্নাকে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর দুটি বই উপহার দেন তারা। একই সঙ্গে তারা তামান্নার পড়াশুনা এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রলীগ সব সময় পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে তামান্নার পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে তামান্নার মা-বাবা। তারা দুইজনেই বলেন, শুধু তামান্নাকে না; সমাজের সকল প্রতিবন্ধীর পাশে থাকবে ছাত্রলীগ এমনটাই কামনা তাদের।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশ, অধিকার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগ্রাম করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার সুদূর ঢাকা থেকে আমাদের ছোট বোন তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তামান্না সংগ্রাম করে তার যে শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করছে, তার পাশে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার আছি। তার পড়ালেখার জীবনে যদি কোনো জায়গায় কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তাহলে ছাত্রলীগ তার পাশে থেকে সমাধান করবে। তার উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, তামান্না খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে তার। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বা পরীক্ষার জন্য যে সাপোর্ট লাগে তার ব্যবস্থা আমরা করব। ভর্তি পরীক্ষার জন্য অন্য সবার চেয়ে তার প্রস্তুতি যেন কোনো অংশে কম না হয়, তার সব ব্যবস্থা আমরা করব।
তিনি বলেন, যদি তার পরিবার চায়, তাহলে আমরা তাকে ঢাকায় ভাল শিক্ষক দিয়ে লেখাপড়ার বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দেব এবং তার পরিবারকে ঢাকায় থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা করব। আমি চাই, তার যে প্রতিভাগুলো আছে তা যেন সঠিকভাবে বিকশিত হয়। তামান্নার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী যেন তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামান্নার পাশে থাকবেন এবং আমরাও তার নির্দেশনায় তামান্নার পাশে থাকব।
ঝিকরগাছা উপজেলা ছাত্রলীগর সাধারণ সম্পাদক সভাপতি এহাসানুল হাবীব শিপলু বলেন, তামান্নার পড়াশুনার সব দায়িত্ব নিয়েছে ছাত্রলীগ। তার পড়াশুনার জন্য যাবতীয় উপকরণ ছাত্রলীগ দিয়ে যাবে। শুধু তামান্না না, তার ছোট্ট দুই ভাই-বোনের পড়াশুনার দেখভাল করার জন্য যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক।
তামান্নার পাশে ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদক পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত তামান্নার বাবা রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী।
তামান্নার মা খাদিজা পারভীন শিল্পী বলেন, সেই ঢাকা থেকে তামান্নাকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীরা এসেছে। তামান্নাকে কাছে পেয়ে তারা মিষ্টিমুখ করান। তামান্নাও তাদের পেয়ে অনেক খুশি। তামান্নাকে তারা অনুপ্রেরণা যোগাতে অনেক নির্দেশনা দিয়েছে। পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে। তামান্নার যারা খোঁজ খবর নিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তামান্নার জন্য
সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন উদ্যমী এই শিক্ষার্থীর মা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল, সাগর হোসেন সোহাগ, সুব্রত হালদার বাপ্পি, সিদ্ধার্থ কুমার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিকুল ইসলাম বাধন ও নাজমুল নাজ, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দীন কবীর
পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক তানজিব নওশান পল্লবসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও।
বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকাল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে যে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
একই সাথে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছেন তিনি।
এছাড়া মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রী তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।