রাজনীতি

মায়ের মমতায় দেশ চালালে জনগণ অবশ্যই সমর্থন দেবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মায়ের মমতা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে জনগণ অবশ্যই সমর্থন করবে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের একটা বিষয় অনুধাবন করতে হবে, নারী কেবল নারী নয়; নারীরা হলেন মা। তাই মায়ের মমতায় যদি আপনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, অবশ্যই জনগণ আপনাকে সমর্থন দেবে।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত ‘রিডিফাইনিং দ্য ফিউচার অব উইমেন’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বও যে নারীরা পালন করছেন, সে কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘এটাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? আমাদের পুরুষরা খুব দুর্বল? না তা নয়। তারা খুব কো-অপারেটিভ। আমি অবশ্যই বিষয়টির প্রশংসা করি।’

বাংলাদেশের সমাজ একসময় ‘খুব বেশি রক্ষণশীল’ ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সংবিধান দেন। সেই সংবিধানে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।’

টানা ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের বিকাশে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রাখার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বাংলাদেশে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্র পাওয়ার কথা তুলে ধরার পাশপাশি স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে নারীরা কোনো সুযোগ পায়নি। সামরিক শাসকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে নারীদের উন্নয়নে কাজ শুরু করে। আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখলাম কোথাও নারীর কোনো জায়গা ছিল না। তারা ছিল পুরোপুরি অবহেলিত।আপনারা জানেন এই পৃথিবীর যেখানেই সামরিক শাসকেরা শাসন করেন… তারা খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু আমি নারীদের জন্য সব কিছু উন্মুক্ত করে দিই।’

অনুষ্ঠানে নারীদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি।

ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি দেশটাকে জানতাম, সমস্যাগুলো কী সেটা জানতাম। আমি আমার বাবার থেকে শিখেছি। আমার বাবা আমার মেন্টর। আমি শিখেছি আমার জনগণ ও দেশকে কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং দরিদ্র মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করতে হয়।’

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই আমি জনগণের সমর্থন অর্জন করেছি। এটাই আমার মূল শক্তি। জনগণের সমর্থন, জনগণের বিশ্বাস… জনগণ অনুভব করে যে আমি যদি এখানে থাকি (রাষ্ট্র ক্ষমতায়), অবশ্যই তারা লাভবান হবে।’

এ সময় তিনি শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করেন।

যখন সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেন দুই বোন। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমার চলার পথও মসৃণ ছিল না। সব খুনি, যুদ্ধাপরাধী, তারা সেই সময় ক্ষমতায় ছিল।… কিন্তু আমি সেগুলো পরোয়া করিনি। আমি ভেবেছি আমাকে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *