রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার জন্য পশ্চিমারা মস্কোর ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ‘নাৎসিমুক্ত’ করার একটি ‘বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করেছেন। অবশ্য পশ্চিমারা পুতিনের এই দাবিকে যুদ্ধের জন্য ভিত্তিহীন অজুহাত বলে অভিহিত করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ অর্থনীতির ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর অবরোধ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে দেশটি থেকে। এই অবস্থা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে সেদেশের নাগরিকদের রোজকার জীবনে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সেই আঁচ কিন্তু রুশবাসীর গায়েও লাগছে।জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, চাকরি হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।দেখে নেওয়া যাক রাশিয়ার দৈনন্দিন জীবনে এই যুদ্ধ কী প্রভাব ফেলছে:
রান্নার তেল, চিনি এবং অন্যান্য মৌলিক পণ্যের দাম বাড়ছে
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই, রাশিয়ায় ভোক্তামূল্য ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মস্কো এবং অন্যান্য শহরের দোকানগুলোতে পণ্য মজুদ রাখার অভিযোগ পাওয়ার পর ওষুধ এবং অন্যান্য কয়েকটি জিনিস বিক্রি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রুবলের মান কমে গেছে।
এদিকে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন ডলার এবং ইউরো ব্যবহার করতে না পারার পর রাশিয়া তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চীনা ইউয়ান ব্যবহার করবে বলে দেশটির অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ সোমবার বলেছেন।
চিনির দামও ২০ শতাংশ বেড়েছে।
স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের দাম বেড়ে গেছে
বিধিনিষেধের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় স্মার্টফোন এবং টেলিভিশনের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
নাইক ও অ্যাপলের মত বড় ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়ায় তাদের পণ্য বিক্রি করছে না।
ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর প্রভাব
রাশিয়ান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা দেশটির আর্থিক লেনদেন অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে।
অ্যাপল, গুগল পে, মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে।
রাশিয়ানরা জামাকাপড় এবং খাবারের জন্য বেশি ব্যয় করছে
রাশিয়ার রাষ্ট্রচালিত প্রমসভ্যাজব্যাঙ্ক (পিএসবি) জানিয়েছে, রাশিয়ানরা ইলেকট্রনিক্স এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কিনছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাপড় ও খাবারের জন্য বেশি ব্যয় করেছে রুশরা। নিষেধাজ্ঞার কারণে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য মজুদের প্রবণতাও বেড়ে গেছে।
মুদ্রাস্ফীতি এবং মজুদ করার জন্য তাড়া-এই দুই কারণেই একজন সাধারণ রুশ নাগরিক মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফেব্রুয়ারির তুলনায় গড়ে ২১ শতাংশের বেশি ব্যয় করেছে।
এছাড়া ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে, ফার্মেসি বিক্রি ২২ শতাংশ এবং জামাকাপড়, জুতার চাহিদা এবং সুপারমার্কেটগুলোতে ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে বলে পিএসবি।
১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ১০.৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনীতি মন্ত্রকের মতে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মূল্যস্ফীতি ৯.০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে গেছে।
সাপ্তাহিক মুদ্রাস্ফীতি আগের সপ্তাহে ০.৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দুই দশমিক ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির এই হার ১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
গণমাধ্যমের ওপর খড়গহস্ত
ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন ও সরকারের সমালোচান করায় বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের খবর পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ রাশিয়ানদের ভরসা এখন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।