দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী ৮ হাজারের বেশি বেড়ে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আর দেশে করোনার ২১ মাসে (মার্চ-২০২০ থেকে ডিসেম্বর-২০২১) এমন আমানতকারী বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬টি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ে তখন ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। মহামারি চলাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই কোটিপতি হিসাবের ওই অংক ১ লাখ ছাড়ায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬ টিতে। সে হিসাবে মহামারির ২১ মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খোলা হয়। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮৩টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার অংক এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১৭ হাজার ৯টি অ্যাকাউন্ট। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকার অংক এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটির উপরে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমার অংক তিন লাখ ২৮ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন। ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।