রাজনীতি

স্বাধীনতা পুরস্কারে বেশিরভাগই ‘মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন’: ফখরুল

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার নিয়েও সরকার ‘দুর্নীতি করেছে’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতা পদক পাওয়া বেশির ভাগই হয় মন্ত্রীদের নয়তো প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে দলের আয়োজনে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আলোচনায় তিনি এমন কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেখেন এত ব্যর্থ, এত অযোগ্য তারা (সরকার) যে, স্বাধীনতার পদক যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন, সেই স্বাধীনতার পদক নিয়ে তারা দুর্নীতি করেছে।

“যেখানে আমির হামজা নামে একজনকে তারা পদক দিয়েছে যার সম্পর্কে…পরে বাতিল করে দিয়ে আবার নতুন করে তারা তদন্ত করছে।”

তিনি বলেন, “শুধু তারই কেনো? আরও যাদেরকে দিয়েছেন, তাদেরটা তদন্ত করুন; তারা কারা? এদের বেশিরভাগই হয় এই মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন অথবা তারা প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন; তাদেরকেই এই পদক দেওয়া হয়েছে এবার।”

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নয়জন ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেওয়া হয়।

‘স্বনির্ভর দেশ গঠনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান’ শীর্ষক এ আলোচনাসভায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘লুটপাটের’ অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার, জনগণের বিরুদ্ধের সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করছি।

“আর তারা কিভাবে অর্থ উপার্জন করবে, কিভাবে লুটপাট করবে, কিভাবে বিদেশে অর্থপাচার করবে, কিভাবে আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি টাকা-পয়সা উপার্জনে স্ফীত করবে- সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “চতুর্দিকে তারা (সরকার) লুটপাট, দুর্নীতি… এমন একটা জায়গায় নিয়ে চলে গেছে যে, এখন এদেশকে রক্ষা করতে হলে একমাত্র এদেরকে সরানো ছাড়া বিকল্প কিছু নাই।”

আজকে এরা গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে আজকে এরা ঘরছাড়া করেছে। ৩৫ লক্ষ আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করেছে।”

ছয়শর বেশি মানুষকে গুম এবং হাজারও মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সরকার হটাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “সমস্ত পেশাজীবীদের কাছে আমরা আহ্বান জানাব, আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী ভয়াবহ সরকারকে সরিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”

বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে চিকিৎসা ও সেবা কমিটির উদ্যোগে এদিন আটজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা-চিকিৎসককে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

এরা হলেন- অধ্যাপক ফরিদুল হুদা, অধ্যাপক মোবিন খান, অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, ডা. সাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক মোমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল হক। এছাড়া বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আবদুস সালামকেও সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

প্রয়াত ডা. মো. ফরিদুল হুদার পক্ষে তার ছেলে নাজমুল হুদা বিপ্লব এবং অধ্যাপক মোবিন খানের পক্ষে ডা. সাইফুল ইসলাম লেলিন ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে দারিদ্র্যের হার দুই পারসেন্ট বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একদম কমে গেছে- এটা বাস্তবতা। দ্রব্যমূল্য এমনভাবে বেড়েছে, ইনফ্লেশন এমনভাবে বেড়েছে যে, মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

“অথচ ২৪ ঘণ্টা আমাদের ওবায়াদুল কাদের সাহেব… তার রাতেও ঘুম হয়, সকালেও ঘুম হয়। তিনি সারাক্ষণ বিএনপির দুঃস্বপ্ন দেখেন এবং সমানে কথা বলতে থাকেন। এখানেই বোঝা যায় যে, বিএনপি শুধু আছে না, প্রবলভাবে আছে”

প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় নিয়ে সরকার ‘মিথ্যাচার করছে’ বলেও অভিযোগ করেন অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল।

চিকিৎসা ও সেবা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সদস্য ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আব্দুস সেলিম, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন ডাবলু, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. শহীদুল আলম বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *