আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া ইউরোপ চলতে পারবে না: কাতার

প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর ইউরোপের যে নির্ভরতা, তার বিকল্প উৎস ‘বাস্তবে পাওয়া সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী সাদ শেহরিদা আল-কাবি।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সরবরাহকৃত গ্যাসের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে।

ইউক্রেইন সঙ্কটের পর বিশ্বে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) অন্যতম জোগানদাতা কাতারকে বিকল্প উৎস হিসেবে চাইছে ইউরোপ। আল-কাবি জানিয়েছেন, ইউরোপের সবাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু ইইউ যে রাশিয়ার বিকল্প উৎস খুঁজছে, তা মোটেও সহজ হবে না।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই জোট চলতি বছরেই রাশিয়া থেকে গ্যাস নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায়, যদিও ইইউ’র আমদানিকৃত গ্যাসের ৪০ শতাংশেরও বেশি আসে রাশিয়া থেকে।

চলতি সপ্তাহে গ্যাস নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছার পর কাতারের রাজধানী দোহা ছাড়েন জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেবেক। যদিও এই মুহুর্তে কাতার থেকে সরাসরি এলএনজি আনার কোনো টার্মিনাল নেই জার্মানির। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য শুক্রবার একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ‘কাতারএনার্জি’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও আল-কাবি বলছেন, “ইউরোপ আমাদের গন্তব্য হতে পারে এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজারও বটে। আমরা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করব।”

কাতার দেশটির সর্ববৃহৎ গ্যাস ফিল্ড ‘নর্থ ফিল্ড’র সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তাতে করে গত চার বছরের মধ্যে গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে আশা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। আল-কাবি জানাচ্ছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির পর এর অর্ধেক ইউরোপে সরবরাহ করতে চান তারা।

“আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ৫০ শতাংশ পাঠাব সুয়েজ খালের পূর্বে, বাকি ৫০ শতাংশ পাঠাব পশ্চিমে।’

বর্তমানে কাতার থেকে রপ্তানির ৮০ শতাংশ গ্যাসই যায় এশিয়ার দেশগুলোতে। এর মধ্যে এমন অনেক চুক্তি আছে, যার কারণে অনেক দেশ গ্যাস নিয়ে অন্যের কাছে বেচতে পারবে না।

এই মুহূর্তে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প কোনো উৎস ইউরোপের কাছে খোলা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

দুবাইভিত্তিক জ্বালানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কামার এনার্জি’র সিইও রবিন মিলস জানান, রাশিয়ার বিকল্প উৎস হয়ে ওঠার সামর্থ্য বৈশ্বিক এলএনজি মার্কেটের এই মুহূর্তে নেই। একমাত্র কাতার যদি বর্তমান ক্রেতাদের বাদ দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে তবেই বিকল্প উৎস হতে পারে।

কিন্তু বর্তমান ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থাকায় তা করতে গেলে কাতারকে বড় অংকের ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে।

রাশিয়ার গ্যাস ও তেল খাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না তা সাফ জানিয়ে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী আল-কাবি বলেন, “জ্বালানিকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিৎ।”

রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ‘কাতারএনার্জি’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও কাবি এটাও বলেন, ইউক্রেইন সঙ্কটে কাতার কোনো পক্ষই নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *