দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের মূল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মুক্তাসহ ঝিনুকের আকৃতিতে ছয় তলা এই ভবনের নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এখন অন্যান্য প্রস্তুতি চলছে।
ভবনের চারিদিকে গ্লাস, ছাদের ওপর স্টিলের ক্যানোফি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি আর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বসালেই ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে সমুদ্রনগরের প্রথম এই রেলওয়ে স্টেশন।
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চলছে এই স্টেশনের কাজ। সদর উপজেলার চান্দের পাড়া গ্রামে পর্যটকদের অপেক্ষায় প্রস্তুত হতে যাচ্ছে দক্ষিণমুখী ছয়তলা ভবন। মূল রেলস্টেশন ভবনের পূর্বপাশে চলছে পদচারী সেতু ও প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনটি ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন নাগাদ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে এখানে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর বিশেষ আকর্ষণ হবে, সকাল বেলা কক্সবাজার গিয়ে ব্যাগ ও লাগেজ স্টেশনে রেখেই ঘোরাঘুরি শেষে রাতের ট্রেনে ঢাকায় ফিরতে পারবেন পর্যটকরা। এতে পর্যটন শিল্পে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, লকার, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী–সেতুতে যাতায়াতের পথ। দ্বিতীয় তলায় থাকবে শপিং মল, শিশু যত্নকেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকামানের হোটেল; চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশু যত্নকেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।
স্টেশন ভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হচ্ছে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। এই ফোয়ারার পাশ দিয়েই স্টেশনে প্রবেশ করবেন যাত্রীরা। আর ট্রেন থেকে নেমে পাশের পথ দিয়ে বের হতে হবে। এ জন্য গমন ও বহির্গমনের আলাদা দুটি সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের তিনটি বড় জায়গা।
ভবনের পূর্বপাশে নির্মিত হচ্ছে ৮০ ফুট লম্বা পদচারী সেতু। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পৃথক তিনটি চলন্ত সিঁড়ি। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ভবনের উত্তরে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ৬৫০ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, গত মার্চ মাস প্রায় ৬৯ শতাংশ কাজ এগিয়েছে এই প্রকল্পে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৮ কিলোমিটার রেলট্রেক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ছোট-বড় সেতু, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং ও হাইওয়ে ক্রসিংয়ের কাজও পুরোদমে চলছে। ১৫০ জন প্রকৌশলীসহ প্রায় ২ হাজার শ্রমিক এ প্রকল্পে দিন–রাত কাজ করছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার শিশির মণ্ডল বলেন, ‘মূল ভবনের কাজ শেষ। এখন চারদিকের গ্লাস ফিটিংস, ছাদের ওপর স্টিলের ক্যানোফি টানতে হবে। এগুলো চীন থেকে আমদানি করা লাগবে। দরজা-জানালা ফিটিংস, টাইলস, স্যানিটারি, বিদ্যুতের লাইন ও এসি লাগানোর কাজ চলছে।
রেলওয়ে প্রজেক্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘মেয়াদের অন্তত দুই মাস আগেই যেন নির্মাণকাজ শেষ করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে স্টেশন ভবনের পশ্চিম পাশে পাঁচতলা ২০টি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ’