জাতীয়

কাঁধে চড়িয়ে অসুস্থ পিতাকে ঈদের জামাতে নিয়ে যায় সন্তান

গুরুতর হাঁপানি রোগসহ বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম পিতা। কিন্তু ৭৫ বয়সী পিতা আবদুল হেকিমের ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ের ইচ্ছা ছিল প্রবল।

বাবার এমন ইচ্ছা পূরণে শেষপর্যন্ত মূষলধারে বৃষ্টির মধ্যে নিজের কাঁধে চড়িয়ে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জামে মসজিদে নিয়ে গেলেন প্রিয় সন্তান দুলাল মিয়া (২৬)।

ঈদুল ফিতরের জামাত শেষে একই কায়দায় পিতাকে কাঁধে চড়িয়ে বাড়ি ফেরার সময় ক্যামেরাবন্দি হলে এ ছবি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে পিতৃভক্তির এমন অনন্য দৃষ্টান্ত।

মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের দিনে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের সুখিয়া গ্রামের এ ঘটনা এখন ‘টক অব দ্য’ কিশোরগঞ্জ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সুখিয়া সরকার বাড়ির প্রবীণ সদস্য আবদুল হেকিম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাঁপানি ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। অসুখ আর বয়সের ভারে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অক্ষম তিনি। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে অন্যান্য মুসল্লিদের সঙ্গে এবারের ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন আবদুল হেকিম। জামাতের আগে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঈদগাহের পরিবর্তে এলাকার প্রসিদ্ধ জামে মসজিদে জামাতের আয়োজন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে পিতার ইচ্ছা পূরণে একমাত্র সন্তান পিতাকে কাঁধে চড়িয়ে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই জামে মসজিদে নিয়ে গেলেন।

ঈদুল ফিতরের জামাত শেষে একই কায়দায় পিতাকে কাঁধে চড়িয়ে গ্রামের মেঠোপথ ধরে বাড়ি ফেরার পথে কোনো একজন মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেন এ দৃশ্য। আর মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে এ ছবি।

দুলাল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মোটেও ভাইরাল হওয়ার জন্য এমন কাজ করিনি কিংবা কল্পনাও করিনি। আমি শুধু সন্তান হিসেবে আমার জন্মদাতা অসুস্থ-বয়োবৃদ্ধ পিতার মুসল্লিগণের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য একটি ছোট্ট দায়িত্ব পালন করেছি।

এ সময় তিনি আরও জানান, অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ পিতার সেবায় এমনিতেই সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে পারার সুযোগ লুফে নেন তিনি। সারা জীবন পিতার সেবা করে কাটিয়ে দিতে চান তিনি। এ সময় তার পিতার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন পিতৃভক্ত সন্তান দুলাল মিয়া।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সুখিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হামিদ টিটুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দুলাল মিয়ার পিতৃভক্তির এমন উদাহরণ এলাকার অন্যান্য সন্তানদের সামনে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এমন কর্তব্যবোধের কারণে তিনি এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন। এমন দায়িত্ববোধ গর্ব ও অহংকারের। সব সন্তানদেরই বয়োবৃদ্ধ-অসুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অক্ষম বাবা-মায়ের প্রতি এমন যত্নবান হওয়া এবং তাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *