বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা নেই, বলা হয়েছে মিশেল ব্যাশেলেকে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈশ্বিক এই সংস্থার মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন দুই মন্ত্রী।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আলাপ হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে। আলাপ হয়েছে ফ্রিডম অব প্রেস এবং ফ্রিডম অব স্পিচ নিয়ে। আলাপ হয়েছে মুশতাক (কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদ) সম্বন্ধে। আলাপ হয়েছে ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে। আলাপ অনেক বিষয়ে হয়েছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ‘বিশেষভাবে’ আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “উনাদের সাথে আমার যে কথা হয়েছে, সেখানে আমি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আপনাদের সাথে যে কথাগুলো বলেছিলাম, ঠিক সেই কথাগুলিই উনাকে জানিয়েছি।”
এ আইনকে ‘উন্নত’ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান আনিসুল হক।
তিনি বলেন, “উনি (সচিব) এটা আরও ভালো করে জানেন এই কারণেই; আপনারা জানেন যে, আমি একটা টিম করে দেই, যেটার মধ্যে লেজিসলেটিভ সচিব মহোদয় হচ্ছেন সভাপতি। এবং যেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিরা আছেন।
“এই প্রতিনিধিরা উনার যে অফিস…জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের অফিসের সাথে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বেস্ট প্র্যাকটিস নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। সেটার একটি প্রতিবেদন আমার কাছে পৌঁছেছে, প্রতিবেদন আমি দেখার পরে এই ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেব, সেটা সিদ্ধান্ত নেব, সেইসব আমরা কথা বলেছি।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ হাই কমিশনার কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, “কোনো উদ্বেগ ছিল না। এটা আলোচনার মধ্যে আসছে।”
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি বৈঠকে মিশেল ব্যাশেলে তুলেছেন জানিয়ে আনিসুল বলেন, “মুশতাক সম্বন্ধে যখন উনি প্রশ্ন করেছেন, আমি পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা তাকে পড়ে শুনিয়েছি। তারপরে তিনি আর প্রশ্ন করেন নাই।”
মানবাধিকার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে দুইপক্ষ জোর দিয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “দুই পক্ষই আমরা জোর দিয়েছি- সেটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা আছেন, তাদেরকে ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে। তখন আমরা বলেছি, আপনারা একটা প্রস্তাব পাঠান, আমরা অবশ্যই সেই প্রস্তাব দেখব।”
বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মিশেল ব্যাশেলের পর্যবেক্ষণ কী ছিল, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “সেটা উনি বলবেন, আমি বলব না।”
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নেই: ব্যাশেলেকে মোমেন
আইনমন্ত্রীর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হয় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলের।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয় নিজ থেকে তুলে ধরার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, “এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং তারা বলে নাই, আমরা নিজের থেকে বলেছি। এই রকম বলা হয়েছে যে, কিছু লোককে কিল করেছে (বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে) এবং তাদের তথ্য পেলে আমরা নিশ্চয় তদন্ত করব দেখব।”
২০০২-০৩ সালের দিকে ‘হার্ট ফেল’ করে মানুষ মারা গেলেও এখন সেটা হয় না বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অপারেশন ক্লিন হার্টের কথা বলছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হার্ট ফেল করে মারা যাওয়ার স্টোরি ২০০৩-০৪-০৫ সালের দিকে শুনতাম। এখন শুনি না।”
এছাড়া গুম এবং সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়ে বৈঠকে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটাই আমরা বলেছি। আমরা তাদেরকে বলেছি, এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস আমাদের দেশে শব্দ নাই।
“তবে, কিছু কিছু লোক বলেছে, ৭৬ জন লোক নাকি গত ১০ বছরে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা বলেছে যে, সরকারই নাকি নিখোঁজ করেছে। ৭৬ জনের ১০ জনকে আবার দেখা গেল, পাওয়া গেছে ঘোরাঘুরি করেছে। আর বাকিগুলো এখনও আমরা ঠিক জানি না। এটা আমরা তাদেরকে জানিয়েছি।”
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই- এমন অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা নিয়ে তিনি বলেন, “আর আরেকটি ইস্যু যেটা হচ্ছে, ওদের ধারণা বাংলাদেশে টেলিভিশন মিডিয়া এগুলোতে কোনো ফ্রিডম নাই। কেউ নিজের কথা বলতে পারে না, সবকিছু সেন্সর করে সরকার।
“আমি বললাম, আমার জানামতে এমন কিছু নাই। আমি তো দেখি, আমাদের মিডিয়া বেশ স্ট্রং। প্রাইভেট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, আমরা একটা কথা বললেই ওরা এক্কেবারে ধরে ফেলে। আমরা তো কখনও তাদের বলি নাই, এটা করবেন না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ মনে করে বোধহয়, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন; তাদেরকে বলা হয়েছে, অনেকগুলো নিবন্ধিত মিডিয়া আছে। কিন্তু সরকারের মিডিয়া ছাড়া কোনো মিডিয়াই নাই। আমি বললাম, আমাদের সারাদেশে ২৮০০ মিডিয়া আছে।
“তাদেরকে বলা হয়েছে, আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটির কোথাও কিছু নাই। এটা আমরা তো ঠিক জানি না। কারণ সিভিল সোসাইটি তো সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এনজিও আমাদের দেশে অনেক। এনজিও কয়েক হাজার।”