জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয়ে প্রতারণা করত মো. রবিউল ইসলাম। এক্ষেত্রে তার টার্গেট থাকত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা। তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সহধর্মিণী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে বুধবার দিবাগত রাত দেড়টায় প্রতারক রবিউলকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা অফিস কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, মেহের আফরোজ শাওনের কাছে ফোন করে নিজেকে (প্রয়াত) ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দেন রবিউল। জানান, নুহাশ পল্লীর উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি বড় ফান্ড এসেছে। যা বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের মোবাইল নাম্বার প্রদান করে ওই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলেন রবিউল।
শাওন ওই মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে উপসচিব পরিচয়ে একজন কথা বলেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য সরকারি ট্যাক্স বা ফি বাবদ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করতে বলেন। শাওন সরল বিশ্বাসে টাকা প্রদান করেন। এরপর ওই উপসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন শাওন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ ঘটনায় নুহাশ পল্লীর ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ মে ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা হয়। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্তকালে বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক রবিউল ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন কৌশলে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম্বার সংগ্রহ করে। এরপর তাদেরকে সংসদের ডেপুটি স্পিকার কখনো বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে ফোন করত। বিদেশি অনুদান প্রাপ্তির প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স ও প্রসেসিং ফি বাবদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিতো। এভাবে এই প্রতারক শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা রিসোর্টের মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিবির হারুন বলেন, অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিলেই যাচাই না করে কোনো লেনদেন করবেন না। কেউ ফোন করলেই সরল বিশ্বাসে টাকা পাঠাবেন না।
ভুক্তভোগী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, প্রতারক রবিউল ফোন করে এমনভাবে কৌশলে কথা বলেছে যে আমি তার প্রতারণা ধরতে পারিনি। এভাবে যাচাই না করে টাকা পাঠানো আমার ভুল হয়েছে।