জাতীয়

চারটি স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। এই স্থলবন্দরগুলো হলো নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ, রাঙামাটির তেগামুখ ও হবিগঞ্জের বাল্লা। এর মধ্যে চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখে কোনো অবকাঠামো নেই বলে তা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। আর হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ভারতীয় অংশ অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় এই স্থলবন্দরের পরিচালনা কার্যক্রম স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়।

এ কমিটি আরও চারটি স্থলবন্দরকে শর্ত সাপেক্ষে চালু রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আয়-ব্যয় বিবেচনা করে এর কার্যক্রম গতিশীল করার কথা বলা হয়েছে। জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিনিয়োগ বিবেচনায় ন্যূনতম জনবল দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে। দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেলপথে আমদানি-রপ্তানি চালু রাখা যেতে পারে।

বর্তমানে দেশের সীমান্তে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি ভারত ও একটি মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে। ১৬টি স্থলবন্দর সচল ও বাকি ৮টি স্থলবন্দর এখনো সচল হয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকগুলো স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বিগত সরকারের আমলে নির্মিত দেশের অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন বিভিন্ন স্থলবন্দর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সম্প্রতি এ কমিটি নৌপরিবহণ উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে বলে নৌ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

রাজনীতি

দেড় দশকেরও বেশি সময় একনায়কতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শোষিত হয়েছে দেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই ফ্যাসিবাদী শাসনের ইতি ঘটেছে।

তবে দীর্ঘ এ সময়ে দলীয়করণ ও দুর্নীতি চর্চার মাধ্যমে অন্তঃসারশূন্য করে দেওয়া হয় প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতনের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান। তৈরি হয়েছে এক ধরনের শূন্যতা। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে সেই পতিত ফ্যাসিবাদ আর দেশি-বিদেশি শক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্ধন দিচ্ছে। এর সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজরাও চেষ্টা করছে ফায়দা লোটার। সেজন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একাট্টা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পক্ষগুলোর মধ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে মতের আমিল দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় দেশের সেনাপ্রধান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, নিজেরা কাদা–ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাপ্রধান যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তা মোকাবিলা করার জন্য ড. ইউনুসের ইমেজই যথেষ্ট। তিনি থাকলে কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশ বিরোধী কোনো অপতৎপরতার কথা চিন্তাও করতে পারবে না।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুভার পড়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে। যাত্রার শুরু থেকেই এই সরকার পড়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জে। বিভিন্ন গোষ্ঠী-সংগঠন তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পাহাড় নিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট অবরোধ করছে। বিভিন্ন ধরনের মব (দলবদ্ধ) সৃষ্টি করে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সরকারের কাজকে। পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো নানাভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র থেকেও পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সহায়তা। এত ‘না’ সত্ত্বেও দমে যাননি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অভ্যন্তরীণ এমন পরিস্থিতির মধ্যে বহির্শক্তির তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার কথাও ভাবতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সচেতন মহলের মতে, এক্ষেত্রে যে ধরনের প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব দরকার, তাতে অধ্যাপক ইউনূসের বিকল্প হিসেবে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বৈশ্বিক পরিসরে কোনো বাংলাদেশির কণ্ঠস্বর সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি করলে সেটা হবে ড. ইউনূসেরই।

ইতিহাস টেনে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে যে শূন্যতা চলছে, এর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরপরই। তখনো দেশে এ ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। পরে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরও বাংলাদেশে তেমনই একজন আইকনিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা ছিল। আর সেই শূন্যতা পূরণের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

বিদেশে অধ্যাপক ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা

একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেলজয়ীর ক্লাবে নাম লিখিয়ে ড. ইউনূস নিজেকে শুধু অনন্য উচ্চতায় উত্তীর্ণ করেননি, বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে চিনিয়েছেন বাংলাদেশকে। নোবেল পাওয়ার পর থেকেই সমগ্র বিশ্বে অনেক বড় পরিসরে অতিথি বা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আসন অলংকৃত করে আসছেন। অলিম্পিক থেকে শুরু করে বহুজাতিক অনেক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে শুধু নিজে সমাদৃত হননি, হয়েছেন বাংলাদেশের পতাকাবাহীও।

শান্তিতে নোবেল জয়ের পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূসের ‘স্যোশ্যাল বিজনেস’ বা ‘সামাজিক ব্যবসা’ তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সেই সুবাদে বিশ্বের অসংখ্য রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। বিশ্ব পরিমণ্ডলে অধ্যাপক ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর।

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে শুরু করে চীনের মতো বিপরীতমুখী শক্তিগুলোও সরকারকে স্বাগত জানায়। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি বৈশ্বিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। বিশ্বের বহু দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন।

ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত হয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূসের অনুরোধে অতি অল্প সময়েই দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও মুক্তি দেন। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর পাকিস্তান সফর শেষে দেশে ফেরার সময় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। ট্রাম্পের বিশ্বস্ত এবং তার সরকারের সরকারি কর্মদক্ষতা দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়া বিশ্বের সফলতম টেক উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের রয়েছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট চালু করতে যোগাযোগও হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সফরেরও সম্ভাবনা রয়েছে ইলন মাস্কের। এ ছাড়াও অধ্যাপক ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ মার্চ চার দিনের সফরে আসছেন বাংলাদেশে। বৈশ্বিক পরিসরে তার যোগাযোগের এমন বহু নজির রয়েছে।

জাতিসংঘ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসের অর্জন

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দেড় মাসের মাথায় জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মাত্র চার দিনের সফরে অধ্যাপক ইউনূস তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পাশাপাশি অধিবেশনের সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।

নানা কারণে অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা তখন বলছিলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের দূরত্ব বিরাজ করছিল। তবে অধ্যাপক ইউনূসের ওই সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটে যায়। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকট অনেকটাই কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন অধ্যাপক ইউনূস। এর সঙ্গে তিনি পরিবর্তিত বাংলাদেশ নিয়ে তার সংস্কারের ধারণাও তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ সম্মেলনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন অধ্যাপক ইউনূস। এই সফরে তিনি মোট ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি চারজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, চারজন মন্ত্রিপর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি, জাতিসংঘ বা সদৃশ সংস্থার ১০ জন প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহী, ১০ জন সিইও বা উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব, নয়টি আয়োজিত অনুষ্ঠান (আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ এবং মধ্যাহ্নভোজ), সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আটটি আয়োজন এবং আরও দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলেও জানা যায়।

সেই সফরে একটি অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানকালে আত্মদানকারীদের দেশপ্রেমের বর্ণনা দেন ড. ইউনূস। যার একটি ভিডিও তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে ড. ইউনূসের বক্তব্যের সময় অতিথিদের নির্বাক হয়ে গভীর মনোযোগে শুনতে দেখা যায়।

সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যে কৌশলী

ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ৬ আগস্টই অধ্যাপক ইউনূস ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ততক্ষণে তার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়ার খবর সামনে চলে আসে। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল থাকে, তা মিয়ানমার এবং সেভেন সিস্টার্সে (ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য) ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, এদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, ফলে এটি বাংলাদেশের চারপাশে এবং মিয়ানমারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হবে। আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।

অধ্যাপক ইউনূসের ওই বক্তব্যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায়ের ক্ষেত্রে তার কৌশলী চিন্তার বিষয়টি সামনে আসে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালানো শুরু করে। এর মধ্যেই ডিসেম্বরে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, হস্তক্ষেপ ও উসকানির বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেয় দলগুলো।

জানুয়ারিতে রাজবাড়ীতে সেনাবাহিনীর এক অনুশীলনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা সদস্যদের সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এর আগে ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন-এটাই সকলের প্রত্যাশা। অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের সময়ে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের কয়েকটি স্থানে বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েও বিজিবির বাধার মুখে পিছু হটে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের কান্ডারি

বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষক হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে নিজের ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বে ভর করে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন ড. ইউনূস। সেই সুযোগ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যেমনি তিনি নিজে তৈরি করেছেন, তেমনই বিদেশ থেকে বিনিয়োগ এনে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেশের অর্থনীতিকেও করেছেন শক্তিশালী। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান এবং ব্যবস্থা করেছেন আত্মকর্মসংস্থানের।

বহির্বিশ্বে যার এত সম্মান, দেশের মাটিতে টিকে থাকতে তাকে অনেক কাঠগড় পোহাতে হয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়ে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকও ছাড়তে হয়েছিল তাকে। অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তৎকালীন নিয়ন্ত্রিত বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রম আইনের একটি হয়রানিমূলক মামলায় ছয় মাসের সাজা পর্যন্ত হয়েছিল তার। এই বয়সেও আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছে লোহার খাঁচায়। দৌড়াতে হয়েছে আদালতের বারান্দায় বারান্দায়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হাসিনার রক্তচক্ষুর ভয়ে দেশমাতৃকার মায়া ছেড়ে চলে যাননি অধ্যাপক ইউনূস। যে দেশকে তিনি এত ভালোবেসেছেন, সেই দেশের মানুষ একদিন প্রতিদান হয়তো দেবে, সেই আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবতীর্ণ হন জাতির কান্ডারি হিসেবে। শেষ বয়সে দেশকে খাদের কিনারা থেকে রক্ষা করতে তার কাঁধেই গুরুভার তুলে দেয় ছাত্র-জনতা।

তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা ইউনূসের সংকট মোকাবিলা, সংস্কার ধারণা

দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসের নেওয়া নানা সংস্কার পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক সমর্থনই বলে দেয়, সংকটে কতটা অপরিহার্য ছিলেন তিনি। অনেকেরই শঙ্কা ছিল, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে অসংখ্য সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে যেভাবে জীবন দিতে হয়েছিল, একই প্রেক্ষাপট হতে পারতো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার পর। তবে প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ইউনূসের আবির্ভাব দেশকে এমন সংকট থেকে রক্ষা করেছে। কারণ ‘বিদেশি কোনো প্রভাবে বা প্রলোভনে’ কোনো পক্ষ বা শক্তির মননে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ থাকলেও সামনে ড. ইউনূস থাকায় তাদের ভাবতে হয়েছে এবং নিরুৎসাহিত হতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, ড. ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ বা প্রতিপক্ষ করে কারও ‘অর্জন’র সম্ভাবনা যেমন শূন্য, তেমনি বৈশ্বিক পরিসরে তাদের একেবারে ‘একঘরে’ হয়ে পড়ারও ঝুঁকি শতভাগ।

সচেতন মহল মনে করে, দেশি-বিদেশি যে ষড়যন্ত্র গত সাত মাসে মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তা হয়তো অধ্যাপক ইউনূস ছাড়া আর কারও পক্ষে সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না। হয়তো আরও রক্তপাত হতো। এমনকি বিপন্ন হতে পারত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা। সেসব চ্যালেঞ্জ তিনি মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। এমনকি এসব মোকাবেলায় তেমন কঠোরতাও দেখাননি।

স্বৈরাচার হাসিনার দেড় দশকেরও শাসনকালে দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে করে ফেলা হয় অন্তঃসারশূন্য। প্রকল্পের নামে লুটপাট করা হয় লাখো কোটি টাকা। খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া সেই অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অধ্যাপক ইউনূস নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে রিজার্ভে সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। দুর্নীতি প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের ফল স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিগত প্রায় সাত মাসে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এরইমধ্যে ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। সেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হলে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হলে এই সংস্কার প্রক্রিয়া দেশে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ক্ষমতা ধরে রাখার খায়েশ নেই, জাতির জন্য সুযোগ

অধ্যাপক ইউনূস বারবারই বলেছেন, তার ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছা নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার প্রতি তার যে বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ অন্যরাও তা বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছেন। বারবারই তিনি নির্বাচনের কথা বলছেন। এরইমধ্যে তিনি সম্ভাব্য সময়ও বলে দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে কিছুটা সংস্কার তিনি চান।

তিনি বারবার বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশ, গণতন্ত্র, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, সুশাসনের স্বার্থে এবং ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের স্বার্থে অধ্যাপক ইউনূসের পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তার পাশে থাকলে তিনি শক্ত হাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবেন। দেশি-বিদেশি অপশক্তিও তার অগ্রগতির পথে বাধা হতে পারবে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধ্যাপক ইউনূসের পাশে থাকলেই বাঁচবে বাংলাদেশ। রক্ষা পাবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা। শক্তিশালী হবে অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে গণতন্ত্র এবং প্রতিষ্ঠিত হবে সুশাসন। এই সুযোগ জাতি হিসেবে সব রাজনৈতিক দল, সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, তরুণ ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এই সুযোগ কাজে না লাগালে জাতি হিসেবে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে হবে।

জাতীয়

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে রোজার প্রথম দিনই ইফতারসামগ্রীর বাজার জমে উঠেছে। রোববার দুপুর থেকেই এই বাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নানারকম ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অনেক দূর থেকেও এসব খাবারের সুভাস নাকে আসে। মুখরোচক এসব ইফতার কিনতে ভিড় করেন বহু ক্রেতা। এরই মধ্যে বিক্রেতারা হাঁকতে থাকেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়, ধনী-গরিব সবাই খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়।’

বাজারটি রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার সার্কুলার রোডে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এ ইফতার বাজার। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে আসেন চকের ইফতারির স্বাদ নিতে। এখানকার ইফতারসামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসাল্লম, বটিকাবাব, টিকাকাবাব, কোফ্তা, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সুতিকাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, জিলাপি, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, হালুয়া, হালিম, দইবড়া, সৌদি পানীয় লাবাং, কাশ্মীরি শরবত, ইরানি শরবতসহ প্রায় ১০০ ধরনের খাবার।

তবে এখানে বেশির ভাগ বিক্রয়কর্মীর মাথায় ক্যাপ বা হাতে গ্লাভসের বালাই নেই। অধিকাংশ খাদ্যসামগ্রীই খোলা। তবে দোকানিরা জানান, ইফতারের প্রায় সব আইটেমই টাটকা-গরম। ফলে এসব খোলামেলা না রেখে উপায় থাকে না। গরম থাকায় ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি দোকানের পাশেই ইফতার তৈরি করা হচ্ছে। খাবারগুলো চুলা থেকে তোলার একটু পরই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ঢেকে রাখার প্রয়োজন হয় না।

সরেজমিনে ভিনদেশিদেরও ইফতার ক্রয় করতে দেখা গেছে। ইরান থেকে আসা জাকারিয়া বিনতে ইফতি নামে তরুণী বলেন, এ বাজারের কথা শুনেছিলাম। তাই সরাসরি দেখতে এসেছি। শত শত মানুষ একসঙ্গে ইফতার কিনছে। আমরাও কিনেছি। এ যেন এক হৃদয়ের বাজার।

বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ ইফতারটি তার দাদা ফটিক চাঁন বিক্রি করতেন ব্রিটিশ আমলে। তারপর তার বাবা আব্দুল রশিদ বিক্রি করেছেন পাকিস্তান আমলে। এখন তার বয়স প্রায় ৭৭ বছর। তিনি বিক্রি করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এ ইফতারটিকে বলা হতো ‘শেখ চূড়ার ভর্তা’। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে নামকরণ হয় ‘বড় বাপের পোলায় খায়!’

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তার ছেলেরাও এ ব্যবসা করছেন। অন্য ব্যবসা থাকলেও দাদা ও বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ইফতার বিক্রি করছেন, ভবিষতেও ইফতার বিক্রি করবেন। এটা পারিবারিক ঐতিহ্য। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে যে ধরনের উপকরণ দিয়ে এ ইফতারটি তৈরি করা হতো, এখনো ওইভাবেই তৈরি করা হচ্ছে। ইফতারটি সব ধর্মের সব ধরনের লোকজন খেতে পারে। এখানে গরুর মাংস দেওয়া হয় না। মুরগি, কবুতর, খাসির মাংসসহ এগুলোর কলিজা দেওয়া হয়। তাছাড়া খাঁটি ঘিসহ প্রায় ১৭ প্রকার মসলা দেওয়া হয়।

পুরান ঢাকার বাহান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির বাসিন্দা শেখ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, এখানকার খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে-এমন অভিযোগ পাওয়া যায় না। কারণ, বিক্রেতারা খুব আপন করে ইফতার তৈরি করেন। ওটা তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। ইফতারকে তারা সম্মান করেন।

দেড়শ বছর ধরে সুতিকাবাব বিক্রি করছেন হাজি রুস্তম সাহেবের পরিবারের সদস্যরা। রুস্তম সাহেবের ছেলে হাজি মাহবুব জানান, তার বাবা, দাদা, দাদার বাবারা এ সুতিকাবাব বিক্রি করতেন। তিনি বিক্রি করছেন ৬০ বছর ধরে। তিনি গরু-খাসির সুতিকাবাব বিক্রি করেন।

বিক্রেতারা জানান, সুতিকাবাব ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টেংরি কাবাব ১০০ টাকা, শিক কাবাব ১২০-১৫০ টাকা, কাঠি কাবাব ৮০-১০০ টাকা। শাহি জিলাপি ৩৫০ টাকা কেজি, রসমালাই ও দই প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা, দুধসর ও পানতুয়া যথাক্রমে ৪৫০ ও ৫৫০ টাকা, ঘিয়ে ভাজা জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

প্রথম রমজানে চকবাজারের ইফতারির বাজার পরিদর্শন করে ভেজাল ও বাসি খাবার বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্যনামক একটি বেসরকারি সংগঠনের সদস্যরা। প্ল্যাকার্ড নিয়ে বেশ কয়েকজন সদস্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করছিলেন। সংগঠনটির সদস্য মো. ফয়সাল জানান, এখানে প্রচণ্ড ভিড়। অধিকাংশ খাবার খোলা বিক্রি হচ্ছে। তবে খাদ্যসামগ্রীগুলো খুব দ্রুত বিক্রি হচ্ছে। চুলা থেকে ওঠানোর মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবু আমরা অনুরোধ করে যাচ্ছি খাবার ঢেকে বিক্রি করতে।

এদিকে পুরান ঢাকার বংশালের আল রাজ্জাক রেস্টুরেন্ট, আল-নাসের, রায়সাহেব বাজারের ক্যাফে ইউসুফ, আল-ইসলাস, মতিঝিল ঘরোয়া স্টারও তাদের ইফতারির সম্ভার সাজিয়েছে। এসব দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা মো. আব্দুল জাব্বার মন্ডল বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১০টি টিম মাঠে কাজ করছি। চকবাজার ইফতার বাজারে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমরা চাই-শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যেন এখানকার খাবারের মান ভালো হয় এবং যথাযথ মূল্যে ইফতারি বিক্রি করা হয়।

খেলাধুলা

ভারতকে আড়াইশর মধ্যে আটকে দিয়েও জয় ছিনিয়ে নিতে পারল না নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিং ব্যর্থতায় লক্ষ্য থেকে বেশ দূরেই থেমেছে তারা। বরুণ চক্রবর্তীর ঘূর্ণিতে কিউইদের ৪৪ রানে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। আর এই হারের ফলে রানার্স আপ হিসেবে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতের দেওয়া ২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বেশিরভাগ কিউই ব্যাটার পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাননি। শুধু অভিজ্ঞ কেন উইলিয়ামসন-ই যা একটু লড়াই করেছেন। ১২০ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৮১ রান তুলতে পেরেছেন তিনি।

ভারতীয় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী স্রেফ ৪২ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন। আরেক স্পিনার কুলদীপ যাদব ঝুলিতে পুরেছেন ২ উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল না ভারত। ৩০ রানের মধ্যেই কোহলি, রোহিত ও শুবমান ধরেন সাজঘরের পথ। তবে চারে নেমে শ্রেয়াস আইয়ারের ৭৯, আর হার্দিক পান্ডিয়া (৪৫) ও অক্ষর প্যাটেলের (৪২) চল্লিশোর্ধ্ব দুই ইনিংসে সম্মানজনক স্কোর পায় ভারত। তাদের ব্যাটে চড়ে ৫০ ওভারে ভারত জমা করে ৯ উইকেটে ২৪৯ রান।

কিউই পেসার ম্যাট হেনরিও বরুণের সমান ৪২ রান খরচায় ঝুলিতে পোরেন ৫ উইকেট। তবে শেষ পর্যন্ত কিউইদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ঢাকা পড়ে গেছে হেনরির দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য।

ভারত-নিউজিল্যান্ডের এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব। এবার সেমিফাইনালের পালা। আগামী ৪ মার্চ প্রথম সেমিফাইনালে গ্রুপ ‘বি’র রানার্স আপ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ভারত। পরদিন (৫ মার্চ) গ্রুপ ‘বি’র চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার মোকাবিলা করবে নিউজিল্যান্ড।

এই দুই ম্যাচের জয়ী দল আগামী ৯ মার্চ মেগা ফাইনালে মুখোমুখি হবে।

খেলাধুলা

২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে প্রাইজমানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল আইসিসি। ২০২৭ সালের আসরের তুলনায় যা ৫৩ শতাংশ বেশি।

সে হিসেবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থেকে আসর শেষ করা দুই দল পাবে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। তাদের চেয়ে সপ্তম ও অষ্টম স্থানে থাকা দুই দল প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ডলার কম পাবে।

এবারের আসরে ইংল্যান্ড হেরেছে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই। তাতে বাংলাদেশের ষষ্ঠ স্থান নিশ্চিত হয়ে গেছে। এতে আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। প্রাইজমানি হিসেবে অতিরিক্ত ২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ঢুকলো শান্তবাহিনীর পকেটে।

বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের দুটিতে হারের পর তৃতীয়টি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। আর তাতে সমান ১ পয়েন্ট পেলেও রানরেটে এগিয়ে থাকায় স্বাগতিক পাকিস্তানের উপরে ছিল বাংলাদেশ। এদিকে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে অষ্টম স্থানে নেমে গেছে ইংল্যান্ড। তাদের পয়েন্ট শূন্য। ১ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান আছে সপ্তম স্থানে।

আইসিসির ঘোষণা অনুযায়ী, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেওয়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার পেতো বাংলাদেশ। এর সঙ্গে সপ্তম হলে আরও ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার মিলতো। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ পেতো ২ লাখ ৬৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। কিন্তু এখন ষষ্ঠ হিসেবে আসর শেষ করার তারা পাচ্ছে মোট ৪ লাখ ৭৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমান প্রায় ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার বেশি।

এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর রানার্সআপ দল পাবে ১১ লাখ ২০ হাজার ডলার। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া দুই দল পাবে ৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

বিনোদন

টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলী এবার চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নতুন সিরিজে হাজির হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরেই ছক ভেঙে নিজেকে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করছেন তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

পরিচালক সৃজিত মুখার্জি আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি আর ফেলুদা পরিচালনা করবেন না। পরিপ্রেক্ষিতে টোটা রায়চৌধুরীকে নিয়ে সত্যান্বেষণের দায়িত্ব পড়েছে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ওপর। এবারের ফেলুদা তৈরি হবে ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ নিয়ে।

কীভাবে কারাগারে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন নারী কারাবন্দিরা? যেখানে কোনো পুরুষের প্রবেশের অনুমতি নেই। সাংবাদিকের ভূমিকায় সেই রহস্য উদ্ঘাটন করতে অবতরণ করবেন শুভশ্রী। পরিচালনায় থাকবেন অদিতি রায়। সিরিজের নাম ‘অনুসন্ধান।’

সদ্যই ত্রিশে পা রেখেছে কলকাতার নামি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ‘গল্পের পার্বণ ১৪৩২’-এ একগুচ্ছ নতুন বাংলা কনটেন্টের ঘোষণা দেয় তারা। তাদেরই একটি ‘অনুসন্ধান’।

এ ছাড়া থাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে ‘নাগমণির রহস্য’ কাহন দেখা যাবে সায়ন্তন ঘোষালের পরিচালনায়। মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন সোহিনী সরকার। ‘তোমাকেই চাই সিরিজে’ অভিনয় করছেন সুহত্র মুখোপাধ্যায়, মানালি মণীষা দে এবং সৃজলা গুহ। পরিচালনায় অরিজিৎ তোতন চক্রবর্তী। তালিকায় থাকা নির্ঝর মিত্রের ‘ডাইনি’র ঝলক ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। অভিনয়ে মিমি চক্রবর্তী।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও পার্ণো মিত্রকে নিয়ে ভৌতিক সিরিজ ‘ভোগ’ নিয়ে আসছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার পোস্টার প্রকাশ্যে আসতেই দর্শক-অনুরাগীদের মধ্যে উন্মাদনার পারদ চড়েছে। কারণ পর পর দুটো ভৌতিক ওয়েব সিরিজে পরিচালক হিসেবে বেশ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন পরম।

সন্দীপ্তা সেনকে নিয়ে ‘বীরাঙ্গনা’ তৈরি করবেন নির্ঝর মিত্র। পুরুষতান্ত্রিক পুলিশ ফোর্সে এক গৃহবধূ হত্যার মামলা নিয়ে মহিলা সাব ইনসপেক্টরের লড়াই দেখানো হবে সিরিজে। যে ভূমিকায় অভিনয় করবেন সন্দীপ্তা।

কৌশিক হাফিজ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য যৌথভাবে নিয়ে আসছেন ‘ভূত তেরিকি’। হরর কমেডি ঘরানার সিরিজে দেখা যাবে ঐশ্বর্য সেন, দ্বীপান্বিতা সরকার, আভেরি সিং রায় এবং দেবরাজ ভট্টাচার্যকে।

চমক এখানেই শেষ নয়; হইচই টিভি স্পেশাল তালিকায় রয়েছে ঋতাভরী চক্রবর্তীর ‘শাখা-প্রশাখা’। স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে এক সিঙ্গল মায়ের লড়াইয়ের গল্প ফুটিয়ে তুলবেন ঋতাভরী। স্বস্তিকা দত্ত অভিনীত ‘আতঙ্ক’ ছাড়াও শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনীনির্ভর একটি সিরিজ তৈরি হচ্ছে এসভিএফ ও হইচইয়ের ব্যানারে।

অর্থনীতি

ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধপথে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসেবে)।

দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড এটি। এর আগে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে। সে মাসে এসেছিল ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
রোববার (২ মার্চ) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৮৪৯ কোটি মার্কিন ডলার; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল এক হাজার ৪৯৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার। জানুয়া‌রিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পা‌ঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

রাজনীতি

বহু বছরের রেওয়াজ অনুযায়ী রমজানের প্রথম দিনে আলেম-ওলামা ও এতিমদের সঙ্গে ইফতার করলেন বিএনপির নেতারা। তাদের সম্মানে রোববার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে দলটি। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ইফতারের আগে বক্তৃতায় দেশবাসীকে রমজানের শুভেচ্ছা জানান তারেক। রমজানের শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আমরা যদি নিজেদের সৎ কাজে উৎসাহিত এবং অসৎ কাজে নিরুসাহিত করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের প্রত্যাশিত সমাজ ও দেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রমজান আমাদের শেখায় সংযমী হতে। কীভাবে ধৈর্যশীল হতে হবে। কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে আল্লাহর যা যা সৃষ্টি আছে, সবকিছুর পাশে আমাদের দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যত্ন নেওয়া রমজান আমাদের শিক্ষা দেয়।

ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি তারেক রহমান বলেন, আসুন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে, রমজানে আল্লাহর দরবারে সেই প্রার্থনা করি। তিনি আরও বলেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সারা বিশ্বে বড়দিন একই দিনে পালন করে। তাই আমরা চিন্তা বা আলোচনা করে দেখতে পারি কিনা, বাংলাদেশের মানুষ সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করতে পারি কিনা। বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে এটি করা সম্ভব কিনা।’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও দেশবাসীর কাছে তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে বসে একশ্রেণির লোক আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে। এই বিভেদ শুধু বিএনপির সঙ্গে ওলামা-মাশায়েখদের নয়, এই বিভেদের মাধ্যমে যে ফাটল সৃষ্টি হবে তার মধ্য দিয়ে বিদেশি শক্তি প্রবেশ করবে। তারা দেশটা ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, আজকে নতুন স্লোগান (ইনকিলাব জিন্দাবাদ) থেকে সবাই সাবধান থাকবেন। এর অর্থ কী? দ্বিতীয় স্বাধীনতা কী? সেকেন্ড রিপাবলিক কাকে বলে? একটা বিশেষ পন্থায় তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আপনারা সতর্ক থাকবেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

মাহফিলে অংশ নেন ফার্মগেট ইসলামি মিশন মাদ্রাসা ও শান্তিনগর বাজার জাতীয় মুসলিম মাদ্রাসার ৮০ শিক্ষার্থী। ইফতার শুরুর আগে দেশের অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী সেলিম রেজা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু, সোবহানবাগ মসজিদের খতিব মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ মসজিদের খতিব মুফতি মহিউদ্দিন ও মিরসরাই দরবার শরিফের সুফি আব্দুল মোমেন নাছেরী। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী ডেনি জন গোমেজ প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক

শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তির বিকাশ ও অভিন্ন স্বার্থের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহী।’

বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাশিয়ান ফেডারেশনের রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু শক্তি করপোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বৈঠকে মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (আরএনপিপি) চলমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রকল্পটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারে পরমাণু শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রসাটমের অব্যাহত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা রসাটমের মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনার সহায়তা প্রত্যাশা করছি, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মহাপরিচালক লিখাচেভ রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতির সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূসকে অবহিত করেন এবং জানান নির্মাণকাজ পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলছে এবং ইতোমধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে।

লিখাচেভ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য গ্রহণীয়।’

তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, প্রকল্পটির টেস্ট রান (পরীক্ষামূলক চালনা) চলছে এবং শিগগিরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। তিনি আরও আশ্বস্ত করেন যে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে রসাটম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বৈঠকে দুই পক্ষ আন্তঃসরকারি ঋণ চুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন, সেখানে ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে উভয় পক্ষ শিগগিরই আইজিসিএ-এর প্রটোকল নম্বর ২ স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়, যা প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করবে। এছাড়া কর্মী প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা প্রটোকল এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরসহ দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য অব্যাহত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন, রাশিয়ার ফেডারেল এনভায়রনমেন্টাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সুপারভিশন সার্ভিস-এর ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সি ফেরোপোন্তভ, রসাটমের প্রথম ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আন্দ্রেই পেত্রভ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও এএসই জেএসই-এর সহসভাপতি আলেক্সি ডেরি উপস্থিত ছিলেন।

মহাপরিচালক লিখাচেভ বর্তমানে এক দিনের সফরে বাংলাদেশ রয়েছেন। এর আগে তিনি সর্বশেষ ২০২৪ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করেন।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ড. ইউনূস অত্যন্ত যোগ্য। তার সক্ষমতার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

সম্প্রতি শান্তিনিকেতনে তার পৈতৃক বাড়িতে ভারতীয় গণমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের সম্পর্কে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস আমার পুরোনো বন্ধু। তিনি বিভিন্ন দিক থেকে একজন অসাধারণ মানুষ।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সতর্ক করে অমর্ত্য সেন বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো দোষারোপ করেছিল।

তিনি বলেন, আপনি যদি হঠাৎ করে কোনো দেশের প্রধান হয়ে যান তাহলে আপনাকেও ড. ইউনূসের মতো কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন দল বিবেচনা করতে হবে। কারণ, সেখানে ইসলামিক দল রয়েছে, হিন্দু দলও রয়েছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মতে, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সাইডলাইন করার চেষ্টা না করে বাংলাদেশের উচিত ঐতিহ্যকে ধারণ করে একসঙ্গে কাজ করা। এ জন্য বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আমি আশা করি, স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালির প্রতিশ্রুতি বজায় থাকবে।

বাংলাদেশ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন, তবে আশাহত নয়। তিনি আশা করেন, আগামী নির্বাচন অনেকের দাবির চেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে পরিবর্তনের অবকাশ আছে।

অমর্ত্য সেন তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় ঢাকায় কাটিয়েছেন এবং সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তার শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমার পরিচয়ের সঙ্গে শক্তিশালী বাঙালিবোধ রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

এই নোবেলজয়ী মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ড. ইউনূসকে বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।